Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 9:13 pm

বশেমুরবিপ্রবির অধীন বঙ্গবন্ধু গবেষণাগার বেহাল

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ: দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় ঝোঁপঝাড়ে পূর্ণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) অধীন বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ারঅ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজ। এ ইনস্টিটিউট নিয়ে বশেমুরবিপ্রবি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌখিক রদবদল হলেও দালিলিক কিছু হয়নি। এ কারণে সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না বশেমুরবিপ্রবি। তাই দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় বেহাল দশা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে গড়া গবেষণাগার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার কুশলী ইউনিয়নে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে গড়ে ওঠা এ ইনস্টিটিউটটি বর্তমানে সাপ-বিচ্ছুর আশ্রয়স্থল ও গবাদি পশুর বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গবেষণাগারটির বিভিন্ন রুমে লতাপাতা গজিয়ে উঠেছে। প্রধান ফটকসহ ভেঙে রয়েছে বেশ কয়েকটি কাচের জানালা। এছাড়া ভবনের চারপাশের দেয়ালে মরিচা পড়ে রং চটে গেছে অনেক আগে। ভেতরের পুরোনো আসবাব দিয়ে চলছে কার্যক্রম। দেয়াল থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা।

বশেমুরবিপ্রবির রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩-১৪ সালে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজে বশেমুরবিপ্রবির আওতায় কার্যক্রম করা হয়। আগে এ গবেষণাগারটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ছিল। তবে তা দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিক্রমে বশেমুরবিপ্রবির অধীন করা হয়। এরপর থেকে গবেষণা কেন্দ্রটির দায়িত্বে বশেমুরবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ।

বশেমুরবিপ্রবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদ জানান, ইউজিসি কর্তৃক তাদের বিভাগের অনুমোদন না হওয়ায় বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের ভবনটিতেও শিক্ষা সহায়ক পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনা না থাকাটাও অন্যতম। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে আমাদের নিজস্ব পরিচয় দেবেন। এছাড়া ভবনটির সংস্কার ও সঠিক পরিচর্যা করবে।

গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আ. রকিব বলেন, ইনস্টিটিউটটির অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য যাতায়াত করা কষ্টকর। তাছাড়া এখানে শিক্ষার্থী অনুযায়ী জায়গারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নাই। তাই আমরা মূল ক্যাম্পাসে নিজেদের জন্য ক্লাস রুম নিয়েছি। আমাদের দাবি ইনস্টিটিউটটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করা হোক।

কুশলী গ্রামের নাসির শেখ বলেন, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত ছিল বঙ্গবন্ধুর নামে গড়ে তোলা এ গবেষণাগারটি। এখন দেখি মাঝে মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গাড়িতে করে আসে, ঘণ্টাখানেক থেকে আবার চলে যায়। কিন্তু ভবনটির বেহালদশা। জাতির জনকের নামের গবেষণা কেন্দ্রটি সঠিক পরিচর্যা না থাকায় ঝোঁপঝাড়ে পূর্ণ হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের কাছে শিগগির ভবনটির সংস্কার ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দাবি জানাই।

বশেমুরবিপ্রবির আওতাধীন ওই ইনস্টিটিউটটের শিক্ষক ড. আবু সালেহ বলেন, বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউটটি শেখ হাসিনা কৃষি ইনস্টিটিউটটের ক্লাস ও গবেষণার জন্য ব্যবহƒত হতো। পরে বঙ্গবন্ধু ইনস্টিটিউট অব লিবারেশন ওয়ার অ্যান্ড বাংলাদেশ স্টাডিজের জন্য মাত্র একটি রুম বরাদ্দ ছিল। ২০১৯ সালে দুর্নীতির কারণে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিদায়ের পর ইনস্টিটিউটটের শিক্ষার্থীরা গোপালগঞ্জের মূল ক্যাম্পাসের হল রুমে নিজেদের ক্লাসের জায়গা করে নেয়। তাই সেটা এ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বশেমুরবিপ্রবির সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব ইনস্টিটিউটটিতে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। তবে কভিডকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।

এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন, এ ইনস্টিটিউটটি নিয়ে আমাদের ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মৌখিক রদবদল হলেও দালিলিক কিছু হয়নি। দালিলিকভাবে আমাদের আয়ত্তে এলে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।