প্রতিনিধি,মুন্সিগঞ্জ :
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় উত্তর ফুলদী গ্রামের পূর্ব পাড়ায় নিজ বসতঘর থেকে এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বিষয়টিকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে ধারনা করছে পুলিশ। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
নিহত গৃহবধূর নাম হালিমা আক্তার (২৫)। সে গজারিয়া ইউনিয়নের উত্তর ফুলদী গ্রামের রাকিব হোসেন প্রধানের স্ত্রী বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৮জুন) সকালে রাকিব বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর বসতঘরে আড়ার সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় হালিমার লাশ দেখতে পান স্থানীয়রা।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত প্রায় ১০ বছর আগে গজারিয়া উপজেলার উত্তর ফুলদী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম প্রধানের ছেলে রাকিব হোসেন প্রধানের সাথে পার্শ্ববর্তী পানির চর গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে হালিমা আক্তারের বিয়ে হয়।
দশ বছরের সংসার জীবনে তাদের নেহা নামে ৯ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। রাকিব পেশায় একজন মিনিবাস চালক। শাশুড়ি ডালিয়া বেগমকে ধার হিসেবে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। রাকিবের শাশুড়ি ডালিয়া বেগমের দাবি রাকিব আগে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল পরে তিনি রাকিবের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা ধার নেন। হিসাব করলে তিনি রাকিবের কাছ থেকে আরো টাকা পাবেন। পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। সর্বশেষ সোমবার (১৭ জুন) রাতে বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। রাকিব তার স্ত্রীকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত গৃহবধূর নয় বছরের মেয়ে নেহা বলেন, ‘আমরা বাবা গতকাল মায়ের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে। সকালে আমি মাকে ফাঁসি দিতে দেখেছি। আমি কান্নাকাটি শুরু করলে আমার চাচি বিউটি এগিয়ে আসে। আমি দরজা খুলে দিলে তারা ঘরের ভেতর ঢুকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে মাকে নিচে নামায়’।
নিহত গৃহবধূর মা ডালিয়া আক্তার বলেন, ‘ সকাল পৌণে ছয়টার দিকে আমাকে ফোন করে জানানো হয়েছিল আমার মেয়ে স্ট্রোক করেছে। খবর শুনে আমরা মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ছুটে যাই, গিয়ে দেখি সে ফাঁস দিয়েছে। সাথে সাথেই আমরা তাকে গজরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, বিষয়টি কৌশলে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রথমে আমাকে স্ট্রোক করেছে বলে জানালো কেন? তারা প্রথম থেকেই মূল ঘটনা আড়াল করতে চাইছে। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চাই’।
নিহতের স্বামী রাকিব হোসেন প্রধান বলেন, ‘ সকল পরিবারের মধ্যে টুকটাক ঝগড়াঝাটি হয়। তবে এ নিয়ে সে তার জীবন শেষ করে দেবে এটা আমি ভাবতে পারিনি। ঘটনার সময় আমি কাঁচপুর ছিলাম, খবর পেয়ে আমি বাড়িতে আসি। বিষয়টি যারা হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছে।তারা মিথ্যাচার করছে’।
গজারিয়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মোঃ মহিদুল ইসলাম বলেন, খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত পরে জানাবো।#