চট্টগ্রামে ৫৪.২% ঢাকায় ৭২.৯%

বস্তিবাসীর শরীরে কভিডের অ্যান্টিবডি বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বস্তিসংলগ্ন এলাকার চেয়ে বস্তিতে বসবাস করা মানুষের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তুলনামূলকভাবে বেশি পাওয়া গেছে। বস্তিসংলগ্ন এলাকায় এ হার ৬২ দশমিক দুই ও বস্তিতে ৭১ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৫৪ দশমিক দুই ও ঢাকায় ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র , বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় অ্যাডভোকেসি সহায়তায় ছিল হেলথ ওয়াচ বাংলাদেশ। গতকাল এ গবেষণার তথ্য প্রকাশ করা হয়।

২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামের বস্তি ও বস্তিসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করেন এমন মানুষদের মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে ঢাকার চারটি (কড়াইল, মিরপুর, ধলপুর ও এরশাদ নগর) ও চট্টগ্রামের দুটি (শহীদ লেন ও আকবর শাহ কাটা পাহাড়) বস্তি জরিপের জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল। ঠিক একই সময় দুই শহরে বস্তি ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় চালানো হয়েছিল জরিপ। দৈবচয়নের ভিত্তিতে জরিপের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। অর্থাৎ বাড়ি বাছাই কিংবা মানুষ বাছাই সব ক্ষেত্রে এই দৈবচয়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে যেসব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের বয়স ১০ বছর কিংবা তার বেশি।

এ জরিপের জন্য একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়েছিল। জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা গত ছয় মাসে করোনার সংক্রমণ এড়াতে কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিলেন কি না, ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান (বয়স, লিঙ্গ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্মসহ অন্যান্য), ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি কোনো স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে কি না, কভিড-১৯-এর কোনো উপসর্গ দেখা দিয়েছিল কি না, বাসায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল কি না, শরীরচর্চা বা কায়িক শ্রম করেন কি না ও বিসিজি টিকা নেয়া হয়েছিল কি নাÑএসব প্রশ্ন করা হয়।

এছাড়া জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তির উচ্চতা, ওজন ও রক্তচাপ পরিমাপ করা হয়েছিল এবং তাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। করোনাভাইরাস, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি), হিউম্যান করোনাভাইরাস (এইচকভ-এইচকেইউ-১), ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বি, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ডেঙ্গু ভাইরাস এবং চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের অ্যান্টিবডি এই ব্যক্তিদের শরীরে ছিল কি না তাও পরীক্ষা করা হয়েছিল। এছাড়া রক্তে ভিটামিন ডি ও জিংকের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়েছিল।

গবেষণার ফল

১. সামগ্রিকভাবে বস্তিসংলগ্ন এলাকার (৬২ দশমিক দুই শতাংশ) তুলনায় বস্তিতে বেশিসংখ্যক মানুষের (৭১ দশমিক) শরীরে কভিড-১৯-এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আবার চট্টগ্রামের (৫৪ দশমকি ২ শতাংশ) তুলনায় ঢাকার (৭২ দশমিক ৯ শতাংশ) বেশিসংখ্যক মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে।

২. নি¤œ আয়ের মানুষের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি।

৩. জরিপে যারা অংশ নিয়েছেন তাদের ৩৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে চলমান অথবা পূর্ববর্তী ছয় মাসের মধ্যে করোনার মতো উপসর্গ ছিল। তাদের মধ্যে জ্বর, শুষ্ক কাশি, গলাব্যথা অথবা একই সঙ্গে করোনার তিনটি উপসর্গই ছিল। তাদের মধ্যে উপসর্গহীন মানুষের তুলনায় কভিড-১৯-এর অ্যান্টিবডির উপস্থিতি বেশি ছিল।

৪. শারীরিক গঠনের তুলনায় ওজন বেশি এমন মানুষের শরীরে বেশি অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা গেছে।

৫. যারা নিয়মিত হাত ধুয়ে থাকেন, মুখে কিংবা নাকে হাত দেন না, বিসিজি টিকা নিয়েছেন এবং মধ্যমানের কায়িক শ্রম করেনÑএমন ব্যক্তিদের সার্স-কভ-২-তে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম।

৬. যারা এর আগে আরএসভি অথবা এইচকভ-এইচকেইউ-১-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কম ঝুঁকিতে রয়েছেন। অন্যদিকে যারা ডেঙ্গু অথবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, তারা কভিড-১৯ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।

৭. যারা করোনায় আক্রান্ত হননি, তাদের তুলনায় যারা এতে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের রক্তে জিংকের মাত্রা যথাযথ পরিমাণে ছিল।

৮. জরিপে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের শরীরে ভিটামিন-ডি’র অভাব উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ করা গেছে। তবে ভিটামিন-ডি’র ঘাটতি অ্যান্টিবডির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলেনি। অর্থাৎ অ্যান্টিবডি রয়েছে এমন মানুষের শরীরে ভিটামিন ডি বেশি বা কম এমনটা লক্ষ করা যায়নি।

সুপারিশ

১. সংক্রমণের মাত্রা বুঝতে অ্যান্টিবডি-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ২. মহামারি-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ঘাটতি কমিয়ে আনতে হবে। ৩. বস্তিবাসীর কারও করোনার উপসর্গ দেখা দিল কি না, তা জানার জন্য পদক্ষেপ বাড়াতে হবে। ৪. করোনার উপসর্গ নিয়ে পক্ষপাতমূলক তথ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। ৫. বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ৬. গ্রাম ও শহর অঞ্চল লক্ষ করে আরও জরিপ ও কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০