Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 11:32 pm

বস্ত্র খাতে বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেশ কিছুদিন ধরেই বস্ত্র খাতের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে এ খাতটি লেনদেনের শীর্ষে উঠে এসেছে। গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের সর্বোচ্চ হার ছিল বস্ত্র খাতের। জুন ক্লোজিংয়ের প্রভাবে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, বাজারে মোট লেনদেনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানির। মোট লেনদেনের ১৯ শতাংশ ছিল বস্ত্র খাতের, চলতি সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার এ খাতের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। তারপরেই রয়েছে ব্যাংকিং খাতের অবস্থান আর তৃতীয় অবস্থানে আছে জ্বালানি এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। চলতি সপ্তাহে মোট লেনদেনের মধ্যে ১৩ শতাংশই ছিল ব্যাংকিং খাতের। এ খাতের দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে ১৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, লেনদেনে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং জ্বালানি খাত। এ দুই খাতেই মোট লেনদেনের ১১ শতাংশ করে দখলে ছিল। জ্বালানি খাতের দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১১৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা এবং নন-ব্যাংকিং খাতের দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি টাকা।

এদিকে দুই মাস আগে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে মোট লেনদেনের ১৮ শতাংশই ছিল ব্যাংকিং খাতের, তারপরের অবস্থান যৌথভাবে ছিল বস্ত্র খাত এবং জ্বালানি খাত। দুই খাতের আলাদাভাবে মোট লেনদেনের ১৪ শতাংশ করে অংশগ্রহণ ছিল। তারপরের অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাতের, যা মোট লেনদেনের ৯ শতাংশ। দুই মাসের ব্যবধানে লেনদেনের দিক দিয়ে বস্ত্র খাত শীর্ষে এবং ব্যাংকিং খাত দ্বিতীয় অবস্থানে নেমে গেছে।

এদিকে পিই রেশিও দিক দিয়ে ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। এ খাতে পিই রেশিও আট দশমিক ৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। তারপরের অবস্থানে বিমা খাতের এবং জ্বালানি খাতের অবস্থান। এ দুই খাতের পিই রেশিও যথাক্রমে ১২ দশমিক ৯ এবং ১৩ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বস্ত্র খাতের পিই রেশিও ২৮ দশমিক দুই পয়েন্টে অবস্থান করছে। দুই  মাস আগে অর্থাৎ মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ব্যাংকিং খাতের পিই রেশিও ছিল আট দশমিক আট পয়েন্টে, জ্বালানি খাতের ২৪ দশমিক পাঁচ পয়েন্টে, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২১ দশমিক আট পয়েন্টে এবং বস্ত্র খাতের ২৭ দশমিক ৯ পয়েন্টে অবস্থান করেছিল।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পিই রেশিও ১৫-এর মধ্যে থাকলে ওই খাতের কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ বিরাজ করে। সে অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ নির্ভর পরিবেশ বিরাজ করছে। তবে যেসব কোম্পানির জুন ক্লোজিং চলছে সেগুলোর ওপর ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে শেয়ারগুলোর দাম বাড়ছে, শেয়ারদর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই পিই রেশিও বাড়তে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বস্ত্র খাতের কোম্পানিগুলোর জুনে হিসাববছর শেষ হবে। সে হিসেবে এসব কোম্পানির লভ্যাংশের মৌসুম আসছে। আর তাই ডিভিডেন্ড গেইন করার জন্য বিনিয়োগকারীরা এসব কোম্পানির দিকে আগ্রহী হয়ে শেয়ার বেচাকেনা করছেন। তবে পিই রেশিও অনুযায়ী ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এ খাতে তুলনামূলক কম বিনিয়োগ করছেন।

তারা বলছেন, দীর্ঘদিন বাজার মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করার কারণে বেশিরভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারী ডে ট্রেডারের ভূমিকা পালন করছেন। তাদের পাশাপাশি কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এ আচরণ করছেন। এতে বাজার দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জুন ক্লোজিংয়ের প্রভাবে বাজার ভবিষ্যতে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকবে বলে আশা করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য সব কোম্পানির ক্লোজিং জুনে। ক্লোজিংয়ের প্রভাব পড়ছে কোম্পানিগুলোয়। লভ্যাংশের আশায় এসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে বলে মনে করছেন তিনি।

জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতের মোট ৪৮টি, জ্বালানি খাতের ১৮টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এছাড়া আরও একাধিক খাতের বেশ কিছু কোম্পানির জুনে হিসাববছর শেষ হয়েছে। চলতি মাসের যে কোনো সময় থেকে এসব কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করার সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ কারণে এসব কোম্পানির দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা।