বহুজাতিক কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য করতে হবে

ভারতে একটি আইন করা হয়েছে যে, সরকারি সহায়তায় দেশে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করলে নির্দিষ্ট-সংখ্যক শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে। এটি সেখানে করতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের পুঁজিবাজারে হচ্ছে না। এখানেও এমন আইন করতে হবে। তাহলে বাজারে বহুজাতিক কোম্পানি আসবে। ফলে বাজার সম্প্রসারিত হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কনস্টেলেশন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং সিনিয়র সাংবাদিক ফজলুল বারী।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, ২০১০ সালে বাজার ধসের পর ইব্রাহিম খালেদের প্রতিবেদনে ৩০ জন কারসাজিকারীর নাম উঠে আসে। তাদের একজনেরও বিচার হয়নি। বরং তারা চোখের সামনে দামি গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং বাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সভায় তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিষয়টি হাস্যকর। এমনকি তারা এখনও বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। যখনই সরকার একটু কঠোর হয়, তখনই তারা প্রতিদিন শেয়ার বিক্রি করে দেন। মাঝে যখন স্বল্পমেয়াদি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে তখন ওই কারসাজির সঙ্গে কিছু ব্যক্তি জড়িত ছিল। যদি এদের শাস্তি দেওয়া না হয়, তাহলে বাজারের এ রকম খারাপ অবস্থা হবেই। এটি বিএসইসির ব্যর্থতা। তারা এর জন্য দায় এড়াতে পারে না। চোরকে প্রশ্রয় দিলে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকবে এবং বাজার ভালো করা যাবে না। আসলে আমরা বাজারের মূল সমস্যা সমাধানে যাই না। আবার শোনা যায় বাজার ভালো করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি প্রচলিত ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এগুলো করে বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারই ভালো হয়নি। বাজার ভালো করতে হলে ভালো কোম্পানি আনতে হবে।
ফজলুল বারী বলেন, বাজারের এ সমস্যার জন্য দায়ী নিম্নমানের কোম্পানি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ডে ট্রেডিং। এ পর্যন্ত বাজারের আসা বেশিরভাগ কোম্পানি নিম্নমানের। যখন এসব কোম্পানি বাজারে আসে তখন তাদের আর্থিক প্রতিবেদন আকর্ষণীয়ভাবে পেশ করা হয়। পরে দেখা যায় ওইসব কোম্পানি সেটা ধরে রাখতে পারে না। হঠাৎ কী এমন হলো কোম্পানিটির যে এ অবস্থানে আসতে হলো বা কেনইবা এরকম হলো? এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। যিনি কোম্পানি অনুমোদন দিতে পারেন। তাকে অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। পুঁজিবাজারের অভিভাবক হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এখন যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে গলদ থাকে তাহলে বাজার কীভাবে ভালো হবে। আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঠিক হতে হবে। তারপর অন্যদিকে নজর দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি বাজারে আসছে না কেন? আসলে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে ভালো কোম্পানি বাজারে আসতে চায় না। প্রথমত, তাদের বুঝাতে হবে। কেন এখানে আসতে হবে। এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ দিতে হবে এবং প্রচারণা চালাতে হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ভারতে একটি আইন করা হয়েছে, সরকারি সহায়তায় দেশে কোনো বহুজাতিক কোম্পানি ব্যবসা করলে নির্দিষ্ট-সংখ্যক শেয়ার পুঁজিবাজারে ছাড়তে হবে। এটি সেখানে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের পুঁজিবাজারে হচ্ছে না। এটি বাধ্য করতে হবে। তাহলে বাজারে বহুজাতিক কোম্পানি আসবে। ফলে বাজার সম্প্রসারিত হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০