বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে অনুপ্রাণিত করুন

 

জানা মতে, বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে আমাদের পুঁজিবাজারে সবচেয়ে বেশি মূলধন রয়েছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের সবশেষ লভ্যাংশ দিয়েছে ৫৫০ শতাংশের মতো। অন্যান্য শেয়ারের সঙ্গে তুলনায় সংখ্যাটি বিরাট মনে হলেও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে পরিমাণটি কমই। ২০১৩ সালেই ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো লভ্যাংশ দিয়েছিল ৬২০ শতাংশ। মূলধনের দিক থেকে স্থানীয় পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় বৃহত্তম বহুজাতিক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লেইন। ওষুধ ও রসায়ন খাতের এ প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৭৬ সালে। সুবৃহৎ এ কোম্পানি ৩৭ বছর ধরে দেশে ব্যবসা করে আসছে প্রায় ১২ কোটি চার লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে। বাজারের তৃতীয় বৃহৎ কোম্পানি বার্জার পেইন্টস অবশ্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বেশ পরে, ২০০৬ সালে। তাদের এ বিলম্ব কোম্পানির পারফরম্যান্সে পরিলক্ষিত হয়নি একেবারেই। বরং শেষবারও ৩৭০ শতাংশ হারে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দিয়েছে তারা। বলার অপেক্ষা রাখে না, কোম্পানিগুলো অন্তর্নিহিতভাবে শক্তিশালী। সুব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ সুশাসনের কারণেও এদের খ্যাতি সুবিদিত। বিনিয়োগকারীর কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার সম্বন্ধে নতুন করে বলার কিছু নেই বললেই চলে; বিশেষ একটি দিক ছাড়া। সেটি হলো, ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ার থেকে সুফল সেভাবে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে গতকালের শেয়ার বিজে ছাপা হয়েছে ‘তিন বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার ধরাছোঁয়ার বাইরে’ শীর্ষক প্রতিবেদন। অনেক পাঠকেরই তা দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে আমাদের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বর্তমানে বিনিয়োগকারীদের কাছে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকোর শেয়ার রয়েছে দশমিক ৮১ শতাংশ। গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লেইন দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং বার্জার পেইন্টসের মাত্র দশমিক ৬০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর হাতে। অথচ যে কোনো বিনিয়োগকারী চাইবেন ওসব কোম্পানির যত বেশি সম্ভব শেয়ার হাতে রাখতে।

উল্লেখ্য, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিচালকদের কাছে সর্বনিম্ন ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে কত শতাংশ শেয়ার রাখতে হবে সে বিষয়ে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। অবশ্য বাজারে আসতে চাইলে কোনো কোম্পানিকে মোট শেয়ারের ১০ শতাংশ অফলোড করতে হয়। তবে তা সাধারণ বিনিয়োগকারীর ভাগ্যে জোটে না বললেই চলে। সেগুলো চলে যায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বিদেশিদের হাতে। এ অবস্থায় বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন ব্যতীত বহুজাতিক কোম্পানিকে অধিক শেয়ার ছাড়তে বাধ্য করা সম্ভব নয়। আবার আইন সংশোধনের মাধ্যমে কাজটি সম্ভব হলেও সেক্ষেত্রে স্থানীয় কোম্পানিগুলো কোনো ধরনের বিপাকে পড়ে কিনা, সেটিও দেখার বিষয়। বিশেষত লাভজনক কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনতে গিয়ে নিম্ন ক্যাটাগরিতে তালিকাভুক্তদের শেয়ার ক্রয়ে বিনিয়োগকারীকে বাধ্য করা হলে তার ফল শুভ না হওয়াই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে বিকল্প পথ হচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে অনুপ্রাণিত করা, যেন তারা নিজে থেকে স্থানীয় বাজারে অধিকতর অংশগ্রহণ করে। এক্ষেত্রে অনেকে হয়তো প্রতিবেশী ভারতের দৃষ্টান্ত টানবেন। কিন্তু সমস্যা হলো, বাংলাদেশ আর ভারতের অর্থনৈতিক মডেল এক নয়। আর কোনো দেশের পুঁজিবাজার স্থানীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ হওয়াই বাঞ্ছনীয়। এক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন, শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে উল্লিখিত কোম্পানিগুলোকে অনুপ্রাণিত করার বহু পন্থা এখনও খোলা। আমাদের নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে ওই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে পুঁজিবাজারে সেসব কোম্পানির অবদান বৃদ্ধির চেষ্টা করা। ধীরে হলেও তারা সাধারণ বিনিয়োগকারীর জন্য শেয়ার ছাড়লে বাজারও একটা ভরসা পাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০