বহুমুখী ব্যবহারে ঠাকুরগাঁওয়ে পাটখড়ির কদর বেড়েছে

শামসুল আলম, ঠাকুরগাঁও: পাটখড়ি একসময় অবহেলার পণ্য হলেও বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির আশীর্বাদে বহু ক্ষেত্রে পাটখড়ির ব্যবহার বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় জ্বালানি, চারকোল, পার্টিকেল বোর্ড মিল ও হস্তশিল্প তৈরিতে। জেলার কৃষকেরা পাট বিক্রি করে যতটা লাভবান হচ্ছেন,
তার সঙ্গে পাটখড়ি বিক্রি করেও কিছুটা পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বেশিরভাগ বাড়িতে জ্বালানি হিসেবে বেশ নাম-ডাক রয়েছে পাটখড়ির। বেশ কিছু মানুষকে পাটখড়ি শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেও দেখা যায়।

এরই ধারবাহিকতায় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সারি সারি পাটখড়ির আঁটি বেঁধে রোদে শুকাতে দিয়েছেন কৃষকেরা। ভালোমতো শুকিয়ে গেলে কৃষকদের বাড়ি থেকেই কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। তারা পাটখড়ি কৃষকদের কাছ থেকে মোটামুটি দামে কিনে ভ্যানে করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। এতে করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। বাড়িঘর, সবজি ক্ষেতের বেড়া, মাচা, পান-বরজ ও বিভিন্ন হস্তশিল্পভিত্তিক পণ্য তৈরির কাজে পাটখড়ির আলাদা ব্যবহার লক্ষ করা যায় আগে থেকেই। কিন্তু বর্তমানে ব্যাপক হারে পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে পাটখড়ি এবং চারকলগুলোতে ব্যাপকহারে ব্যবহার করা হচ্ছে পাটখড়ি। অন্যদিকে পাটখড়ি পুড়িয়ে ওই ছাই ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলের ক্ষেতে।

সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুৎ বাজার এলাকার কৃষক মো. আফজাল হোসেন জানান, ৫০ শতক জমির পাট থেকে যে পাটখড়ি পেয়েছি, সুন্দরভাবে শুকিয়ে পরিষ্কার করে বিক্রি করতে পারলে তা থেকে সাত-আট হাজার টাকা আয় করা যায়। পাটখড়ি সরাসরি চারকল বা বোর্ড ফ্যাক্টরিতে দিতে পারলে আরও বেশি দামে বিক্রি করা যেতে পারে।

সদর উপজেলার গিলাবাড়ী গ্রামের কৃষক মো. নুরল ইসলাম বলেন, পাটকাঠির চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। পাটখড়ি বিক্রি করে কিছুটা লোকসান পুষিয়ে নেয়া যায়। পাটখড়ি আগে শুধু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে নানামুখী কাজে ব্যবহারের ফলে কৃষকেরা বাড়তি লাভবান হচ্ছেন। অনেকেই বাড়ি থেকে পাটখড়ি কিনে তা শহরে বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাসেল ইসলাম জানান, জেলায় এ বছর সাত হাজার ৭৫৫ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৯৮ হাজার ৪১৫ বেল। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলার সব উপজেলায় কম-বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। জেলায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ অঞ্চলের পাট রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মিল-কারখানায় বিক্রি করা হয় বলে শোনা যায়। এর পাশাপাশি পাটখড়িও এরই মধ্যে রপ্তানি হতে দেখা গেছে। এতে কৃষকেরা বাড়তি মুনাফা অর্জন করতে পারছেন। ভবিষ্যতে পাটখড়িও দেশের বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড মিল ও চারকল মিলে দিয়ে কৃষকেরা আর্থিক দিক দিয়ে আরও লাভবান হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০