পাটকাঠির চারকোল রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে

বহুমুখী ব্যবহারে সাতক্ষীরায় পাটের চেয়ে পাটকাঠির মূল্য বেশি

ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার কৃষকদের মাঝে আশার সঞ্চার করছে পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহার। জেলার কৃষকরা আশা করছেন, পাটকাঠির ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে এখানকার বিস্তীর্ণ জমিতে পাট চাষ বাড়বে। জেলায় মৌসুমে ২৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার পাটকাঠি বিক্রি হয় বলে জানা গেছে। এসব পাটকাঠি দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। এর পরিপ্রেক্ষিতে কৃষকরা পাটকাঠি থেকে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনে চারকোল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

জেলার তালা উপজেলার পাটচাষি আবিদুল সিদ্দিকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, পাটকাঠি এ জেলার কৃষকদের মাঝে আশার আলো জ্বালিয়েছে। জেলায় পাটের চেয়ে পাটকাঠির দাম তুলনামূলকভাবে এবার বেশি, যে কারণে জেলার চাষিরা এবার পাটখড়ির (পাটকাঠি) দিকে নজর দিচ্ছেন বেশি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার ৮৬ হাজার ২৯৮ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদিত পাটকাঠির মূল্য দাঁড়াবে ২৫ কোটি ৮৮ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৭ টাকা। জেলায় আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমি। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান ও সাতক্ষীরায় পাটখড়ি পুড়িয়ে কার্বন তৈরির জন্য গড়ে উঠেছে প্রায় ২৫টি কারখানা। দেশে মোট উৎপাদিত পাটখড়ির অর্ধেক এই খাতে ব্যবহার করে বছরে প্রায় আড়াই লাখ টন কার্বন তৈরি করা সম্ভব। এটি থেকে রপ্তানি আয় ৩২ কোটি ডলার বা আড়াই হাজার কোটি টাকা আসবে বলে উৎপাদক ও রপ্তানিকারকরা অনুমান করছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে জেলার সাতটির মধ্যে ছয়টি উপজেলায় পাট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার বেল। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫৭ হাজার বেল, কলারোয়ায় ৪২ হাজার বেল, তালায় ৩৫ হাজার ৪০০ বেল, দেবহাটায় ১০২০ বেল, কালীগঞ্জে ১৬২০ বেল, আশাশুনিতে ৯০০ বেল এবং শ্যামনগর উপজেলায় ৬০ বেলের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

এদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৬২৪ বেল পাট উৎপাদিত হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় পাটের আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। সাতক্ষীরা সদরে চার হাজার ৭৫০ হেক্টর, কলরোয়ায় তিন হাজার ৫০০ হেক্টর, তালায় দুই হাজার ৯৫০ হেক্টর, দেবহাটায় ৮৫ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ৭৫ হেক্টর ও শ্যামনগরে পাঁচ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গতবছরের তুলনায় ৭৩০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হ্রাস পেয়েছে। এর পরও ৩৭৬ বেল পাটের উৎপাদন বেশি ধরা হয়েছে।

সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের দাবি, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উৎপাদনের মান ভালো। চলতি মৌসুমে জেলা কৃষি বিভাগ হেক্টরপ্রতি ১২ বেল পাট উৎপাদিত হবে ধারণা করছে। নতুন করে জেলায় পাঠখড়ির গুরুত্ব বেড়েছে। বিঘাপ্রতি জমিতে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার পাটখড়ি বিক্রি করছেন পাটচাষিরা। এছাড়া পানের বরজ, ঘেরে সবজি চাষ ও জ্বালানি হিসেবে পাঠখড়ির চাহিদা বরাবরই রয়েছে সাতক্ষীরা জেলায়।

কয়েকজন কৃষক জানান, পাটের চেয়ে পাটখড়ির চাহিদা ও দাম বেশি। সম্প্রতি ব্যাপক পরিসরে পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বদলে যাবে পাটশিল্পের অবস্থান। পাট থেকে খুলবে সম্ভাবনার দ্বার। দেশের মোট উৎপাদিত পাটকাঠির ৫০ ভাগ চারকোল উৎপাদন করে রপ্তানি করতে পারলে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে জানান এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। তারা এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সরকারের প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা চান।

জানা গেছে, দেশে ২০১২ সালে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পাটকাঠি থেকে অ্যাকটিভেটেড চারকোল উৎপাদন শুরু হয়। ওই বছরই চীনে এ পণ্য রপ্তানি হয়। আট বছর আগে পাটকাঠিকে ছাই বানিয়ে তা রপ্তানির পথ দেখান ওয়াং ফেই নামের চীনের এক নাগরিক। বর্তমানে চীন ছাড়াও তাইওয়ান, জাপান, হংকং ও ব্রাজিলেও এটির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া চারকোলের বড় বাজার রয়েছে মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামরবাড়ি) উপ-পরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) নুরুল ইসলাম বলেন, পাটখড়ির বহুমুখী ব্যবহারের কথা বিবেচনা করে জেলায় চারকোল স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে। পাটচাষিদের মাঝে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষিপণ্যকে শিল্পে রূপান্তরের জন্য সরকার নানামুখী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০