বাঁশখালীতে বেড়িবাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার খানখানাবাদ  ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকায় সাঙ্গু নদী এবং বঙ্গোপসাগরের মিলিত পানির স্রোতে তলিয়ে যাওয়া ২৯৩ কোটি টাকার বেড়িবাঁধ রক্ষায় বালুভর্তি জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ এবং অবশিষ্ট বাঁধ যেন নতুন করে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজ গত মঙ্গলবার থেকে এখন অবধি অব্যাহত রয়েছে। বাঁধে নতুন করে ভাঙন ঠেকাতে ও ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ চালাচ্ছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ডিবি এসএস হ্যালেনচাক (ডি-২৪৮৭৯) নামে এক বিশাল আকারের বার্জের মাধ্যমে অতিরিক্ত ভাঙন বাঁধের নিচে পাউবোর ঠিকাদারের শ্রমিকরা প্রতিদিন কয়েক হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ব্লক ধসের স্থানে ফেলছে। ফলে কিছুটা নিরাপদ হয়ে উঠেছে ভাঙনকৃত কোটি টাকার সেই বাঁধ।

সরেজমিনে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, কদমরসুল উপকূল রক্ষায় নির্মিত কোটি টাকার সিসি ব্লক বেষ্টিত বাঁধের তলিয়ে যাওয়া ও ভাঙন অংশে বিশাল আকারের বার্জের মাধ্যমে একের পর এক বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং করা হচ্ছে। ওই বার্জ থেকে একবারে ৭শ থেকে ৮শ জিও ব্যাগ ফেলানো যায়। ফলে প্রতিদিন দুই বার করে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের নিচে ১৪শ থেকে ১৬শ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এতে প্রতিদিন বাঁধ মেরামত কাজে অংশ নিচ্ছেন অর্ধশতাধিক শ্রমিক। অন্যদিকে পাউবোর ব্যাপক তৎপরতাও চোখে পড়েছে। সরেজমিনে উপস্থিত থেকে প্রতিটি কাজ তদারকি করতে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট পাউবোর দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের।

উপস্থিত পাউবো কর্মকর্তারা জানায়, ‘গত মঙ্গলবার থেকে বার্জের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের বিভিন্ন অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। এতে অর্ধশতাধিক শ্রমিক ডাম্পিং কাজে অংশ নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জায়গায় প্রতিদিন এক থেকে দেড় হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। যতক্ষণ পর্যন্ত বাঁধ সম্পূর্ণরূপে নিয়ন্ত্রণে আসবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ডাম্পিং কাজ চলমান থাকবে।

জানা যায়, ‘বাঁশখালী উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৮ বছর আগে ২৫১ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৫ সালের ১৯ মে প্রকল্পটি একনেকে পাস হয়। বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণে কয়েক দফা সময় ও ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালে প্রকল্পের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়। তবে কয়েক বছর যেতে না যেতেই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে পানির স্রোতে তলিয়ে যায় কদমরসুল এলাকায় বাঁধ রক্ষায় নির্মিত সিসি ব্লক বেষ্টিত এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।’

পাউবো সূত্র জানায়, বাঁশখালী উপজেলার বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু নদীর পাড়ে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ২০১৫ সালের ১৯ মে একনেকে পাস হয়। যাতে ব্যয় ধরা হয় ২৫১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। তবে কয়েক দফা প্রকল্পটির সময় ও ব্যয় বেড়ে তা হয়েছে ২৯৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এতে ৬ দশমিক ২ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ভাঙন রোধ ও পুনরাকৃতিকরণ, ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাঁধ পুনরাকৃতিকরণ করার কথা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, ‘বেড়িবাঁধ তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে গ্রামবাসীর। অতীতে আমাদের গ্রামের অনেকে সব সহায় সম্বল হারিয়েছে। ভাবছিলাম টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে আমরা নিরাপদে বসবাস করতে পারব। কিন্তু বাঁধ তলিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেই বিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলছি। সরকারের প্রতি একটাই দাবি, আমরা একটা টেকসই বেড়িবাঁধ চাই।’

কদমরসুল এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘সাঙ্গু নদীর গতিপথ পরিবর্তনের কারণে পার্শ্ববর্তী জেগে ওঠা চর বেড়িবাঁধ ভাঙনের মূল কারণ। চরটি যতক্ষণ পর্যন্ত অপসারণ করবে না ততদিন পর্যন্ত কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ টিকবে না। তাছাড়া বেড়িবাঁধ রক্ষায় ভালো মানের কাজ ও সঠিক নকশা প্রয়োজন।’

পাউবোর চট্টগ্রাম উপ-বিভাগীয় সহকারী প্রকৌশলী গোলাম কাদির বলেন, ‘বাঁধ ভাঙনের পর থেকে বাঁধ রক্ষায় সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। ইতোমধ্যে ভাঙন ও ধসে পড়া বাঁধে জিও ব্যাগ এবং টিউব বসানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে বার্জের মাধ্যমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে। আশা করি বাঁধে নতুন করে কোনো ভাঙন দেখা যাবে না।’

খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘বেড়িবাঁধ তলিয়ে ও ধসে পড়ার পর থেকে পাউবো নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করছে। আগে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে জিও ব্যাগ ও টিউব বসানো হয়েছিল। এখন বার্জের মাধ্যমে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং করা হচ্ছে। আমি নিজেও বাঁধ মেরামত কাজে পাউবোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সময় দিচ্ছি। যাতে কাজে কোনো ক্রুটি না থাকে। সাঙ্গু নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও পার্শ্ববর্তী জেগে ওঠা চর বেড়িবাঁধ ভাঙনের মূল কারণ। জেগে ওঠা চর অপসারণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা না নিলে যে কোনো মুহূর্তে পুরা কদমরসুল এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০