বাঁশখালীতে ৭০ গ্রাম প্লাবিত, লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি, বিশুদ্ধ পানির সংকট

ভারী বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে নিম্ম অঞ্চল। বাঁশখালী শিলকুপ মনকিচর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: শেয়ার বিজ।

প্রতিনিধি, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম): টানা ভারী বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বাঁশখালীর সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। সব জায়গায় বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর। পানিতে মাঠ ঘাট প্রান্তর ডুবে থইথই। বর্তমানে এই উপজেলায় বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ছড়া-ঝিরি নদ-নদীর পানি বাড়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে গত তিন দিন ধরে নাই বিদ্যুৎ। এক প্রকার অন্ধকারাচ্ছন্ন দিন পার করছেন এই উপজেলার বাসিন্দারা।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকাল থেকে উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, কালীপুর, বৈলছড়ি, কাথরিয়া, সরল, শিলকূপ, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, ছনুয়া, পুইঁছড়ি, চাম্বল ও পৌরসভার প্রায় বাড়িঘর ও দোকানে পানি প্রবেশ করেছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা।

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে ছড়া-ঝিরি ও নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁশখালীর বৈলগাঁও, সাধনপুরের রাতাখোদ্দ, খানখানাবাদের প্রেমাশিয়া, কদম রসুল, রায়ছাটা, বাহারছড়ার ইলশা, পাইরাং, পশ্চিম চেচুরিয়া, সরল, ভাদালিয়া, মনকিচর, গণ্ডামারা, বড়ঘোনা, পশ্চিম চাম্বল, শেখেরখীল, পুঁইছড়ি, ছনুয়াসহ বাঁশখালীর প্রায় নিম্ম অঞ্চলের বাড়িঘর নিমজ্জিত রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে সকল এলাকা। এছাড়া ভারী বর্ষণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বাধ ভেঙ্গে উপকূলের চিংড়িঘেরও ডুবে কয়েক কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি রোধে পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস কারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন।

ছনুয়ার খুদুকখালীর বাসিন্দা ছমদ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে টিন দিয়ে মাটির ঘর তৈরি করেছিলাম। প্রচন্ড বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট পানিতে আমার মাটির ঘর ভেঙে গেছে। থৈ থৈ পানিতে আমার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। আমি আর এই ঘর তৈরি করতে পারবো না। এখন আমি অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। পুকুর ডুবে সব মাছ চলে গেছে। হাস-মুরগী ভিজে মরে গেছে। এখনো পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধি আমাদের দেখতে আসেনি। পানির তোড়ে আমার মাটির ঘর সম্পূর্ণ তলিয়ে গেল। আমি এখন কি করব।’

নাপোড়া ভিলেজের পাড়ার বাসিন্দা রহমান মিয়া বলেন, ‘আমাদের উচু এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। নিচু এলাকায় পানি উঠে ওঠানে ও বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করেছে। বর্তমানে এলাকার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছেন না। স্লুইস গেট দিয়ে নদীর পানি ডুকলে আমরা আরও বেশি পানিবন্দি হয়ে পড়ব।’

খানাখানাবাদের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘পরশু দিন থেকে বাড়িতে পানি ঢুকেছে, ঘরের সবকিছু পানিতে তলিয়ে গেছে। সকাল থেকে শুধু চনামুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসেনি। আমাদের আশপাশের ৩৫টি পরিবার রয়েছে। সবার ঘরবাড়ি ডুবে গেছে।’

খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন হায়দার বলেন, ‘টানা বৃষ্টির কারণে আমার ইউনিয়নের কদমরসুল, প্রেমাশিয়া, রায়ছাটার সব এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে ১০ হাজার পরিবারের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এসব পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। এদিকে ফসলি জমি, মাছঘের ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাঈদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ভারী বর্ষণে কয়েকটি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি কমলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ-খবর নিচ্ছি। পাশাপাশি অতিভারী বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সকাল থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাকারীদের অন্যত্রে সরে যেতে বলা হচ্ছে। তারা আশ্রয়কেন্দ্র চলে গেলে পাহাড় ধসে প্রাণহানি থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী জান-মালের রক্ষায় জনপ্রতিনিধিদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রেখেছি। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শুকনো খাবার ও তাদের মাঝে বিতরণের জন্য ১৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০