মাহমুদুল হক আনসারী: চট্টগ্রাম বাঁশখালীর উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত এলাকা প্রতিদিন নানা পেশার পর্যটকের উপস্থিতিতে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠছে। স্থানীয় রাস্তাঘাট কোলাহল ও আনন্দে ভরে উঠছে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায়। সারি সারি ঝাউবন আর সুদীর্ঘ বেড়িবাঁধের ওপর এ সমুদ্রসৈকত যে কারও মন কেড়ে নিতে পারে। কক্সবাজার, পতেঙ্গা বা কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ছাড়াও বাংলাদেশে যে কয়েকটি স্বল্প পরিচিত সমুদ্রসৈকত রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চট্টগ্রাম জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাঁশখালী সমুদ্রসৈকত। বাঁশখালীর ছনুয়া গন্ডামারা, খানখানাবাদ ও প্রেমাসিয়া এলাকায় এই পর্যটন। বালুময় বেলাভূমি ও ঝাউবনে ঘেরা বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতকে কক্সবাজারের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত, যা সর্বমোট ৩৭ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। গত এপ্রিল মাস থেকে প্রতিদিন শত শত লোকের আগমন আর পদচারণায় মুখর থাকছে এ পর্যটন স্পটটি। উপজেলা প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে পর্যটন এলাকা হিসেবে বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয়া হলেও কর্মকর্তাদের পরিদর্শন ছাড়া এখন পর্যন্ত সফল কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন নজরে পড়ছে না। বিস্তৃত সাগরের বুকে সূর্যাস্তের দৃশ্য, লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ বা দলবেঁধে বিচ ফুটবলে মেতে ওঠার আনন্দ ভ্রমণকারীদের দেয় এক অপার্থিব পূর্ণতা ও আনন্দ। এখানে দূষণমুক্ত হাওয়া, অনাবিল আলো আর বাতাসে ভ্রমণপিপাসুদের আনন্দের হাঁসি দেখতে পাওয়া যায়। তবে যাতায়াতের রাস্তা আর পরিবহন ব্যবস্থার অগ্রগতি হতে হবে। রাস্তা প্রশস্ত ও সংস্কার করলে বিনোদনের এই স্পটটি অর্থনীতিতে অবদান রাখবে বলে মত প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক নেতা লেখক মো. খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, আমার প্রিয় বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতটি নান্দনিক এবং পর্যটন আকর্ষণ করতে আমি উদ্যোগ নেব। এলাকার সংস্কৃতিমনা ও পর্যটনভক্ত জনগণ বলেন, দিন দিন এই উপকূলীয় সমুদ্রসৈকত সবার কাছে আকর্ষণীয় হচ্ছে। বিনোদন ও পর্যটন স্পটে রূপ নেয়ায় এ বছর ঈদ ও বৈশাখী ছুটিতে প্রচুর লোকসমাগম হয়েছে। এলাকার চেয়ারম্যান জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, যারা দূরে যেতে চান না, তাদের জন্য বাঁশখালীর এ সমুদ্রসৈকত অনন্য। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাব। সমুদ্রসৈকত এলাকাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ‘বাঁশখালী সমিতি কক্সবাজার নামক সমিতি’। বাঁশখালী উপকূলীয় সমুদ্রসৈকতকে পর্যটনবান্ধব করার জন্য বাঁশখালী সমিতি কক্সবাজারের প্রথম উদ্যোগে বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে ১০টি কিটকট প্রদান করেছেন বলে জানান। কক্সবাজারে বসবাসরত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত ও ব্যবসায়ীসহ সবাইকে নিয়ে ৩১ জনবিশিষ্ট কার্যকরী কমিটির যাত্রা শুরু হয়েছে ‘বাঁশখালী সমিতি কক্সবাজার’ নামে। এটি আত্মপ্রকাশের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতে কিটকট বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। তিনি আরও জানান, এই পর্যটন স্পট ঘিরে আমাদের দ্বিতীয় উদ্যোগ আরও সুন্দর হবে। তবে বাঁশখালী সমুদ্রসৈকতকে একটি সত্যিকারের পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে হলে পর্যটন করপোরেশনকে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পর্যটন করপোরেশন ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা লক্ষণীয় নয় বলে অভিযোগ শুনতে হয়। পর্যটন খাতকে বেগবান, আকর্ষণীয় ও সফলভাবে এগিয়ে নিতে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা জোরদার করার দাবি জনগণের। চট্টগ্রাম থেকে বাঁশখালীগামী গণযাতায়াত নিরাপদ ও ভোগান্তিহীন করে তুলতে হবে। প্রধান সড়ক প্রশস্ত করতে হবে। তৈলারদ্বীপ ব্রিজ টোল বন্ধ করে দেয়া দরকার। এখন পর্যন্ত এই ব্রিজের টোল আদায়কে অবৈধ হিসেবে দেখছেন স্থানীয় সচেতন জনগণ। সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি আলহাজ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী উদ্যোগ গ্রহণ করে চেষ্টা করেছেন। কিছু সময় টোল আদায় করা বন্ধ ছিল। কিন্তু কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল আবার সেই টোল তোলা শুরু করে। একটি সিন্ডিকেট বাঁশখালী বাস মালিক সমিতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। সেই সিস্টেমের ও সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি মিলছে না এ অঞ্চলের যাত্রীসাধারণের। বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে পর্যটনশিল্প। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত পর্যটনশিল্পে বহু এগিয়ে আছে। সেই দেশে ভ্রমণ করতে বাংলাদেশসহ সারা দুনিয়ার মানুষ যায়। নানা ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যের আকর্ষণ তৈরি করেছে। ফলে বিদেশিরা সেখানে যায়। বার্মার বিভিন্ন অঞ্চলেও দর্শনীয় স্পট রয়েছে। সেখানেও নানা দেশের মানুষ যায়। ভুটান ও মালয়েশিয়ায়ও পর্যটন স্পট দিয়ে অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশে এই খাতটির সম্প্রসারণ হলে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং আয় বাড়বে। দেশে বেকার সমস্যার সমাধানে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসবে। যেহেতু সরকার পর্যটন করপোরেশন করেছে, সে হিসেবে এই খাতকে সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে আরও সময়োপযোগী কর্মসূচি নেয়া যেত। বাঁশখালীর ইকোপার্ককে আরও সাজানো দরকার। এই পার্কের যাতায়াত আরও কাছাকাছি। দুনিয়ার পর্যটনের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে হলে কক্সবাজারের মতো দেশের পর্যটন এলাকায় বিশুদ্ধ রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেল-মোটেল তৈরি করতে হবে। ওইসব এলাকার আইনশৃঙ যঙলা বজায় রাখতে হবে। সন্তাসি কর্মকাø নাগালের মধ্যে রাখতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা রাখতে হবে। আগত পর্যটকের নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। চট্টগ্রামজুড়েই নানা স্থানে পর্যটন স্পট। এই স্পটগুলো সাজানো গেলে অর্থনীতির অনেক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্তজনের অভিমত। বাঁশখালী উপজেলাটি পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জনগণের যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ পথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মাত্র ৪০ কিলোমিটার রাস্তা বাঁশখালী পার হলেই কক্সবাজার গিয়ে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও থানার দেখা মেলে। তাই এখন আর ঘুরে দীর্ঘ রাস্তা পার হয়ে কক্সবাজার জেলায় না গিয়ে বাঁশখালী উপজেলার রাস্তা ব্যবহার করে। তাই সার্বিকভাবে এই উপজেলার উন্নয়নের সঙ্গে পুরো এ অঞ্চলের উন্নয়ন হিসেবেই দেখছে সাধারণ মানুষ।
মুক্ত লেখক, চট্টগ্রাম