Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 9:55 pm

বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ ধুনটের দুই হাজার পরিবারের

পারভীন লুনা, বগুড়া: বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন বগুড়ার ধুনট উপজেলার পাকুড়িহাট গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবার। বাঁশ শিল্পের তারা নিপুণ কারিগর। পূর্বপুরুষ বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছেন গ্রামের নারী ও পুরুষরা। অন্য কাজ করার মানসিকতাও নেই তাদের। এই পরিবারগুলোর কৃষি জমিও নেই তেমন। বিভিন্ন আকার ও শৈলীতে কাটা বাঁশের এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার পাকুড়িহাটা গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখা যায় বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার ধারে, বাড়ির পাশে ফাঁকা জায়গায়, পুকুরের পাড়ে বসে শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষেরা বাঁশ দিয়ে হরেক রকম জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত। কেউ বাঁশ কাটছেন, কেউ বাঁশ চাঁচছেন, কেউ বাঁশের বেতি তুলছেন। 

শাহাজাহান নামের এক কারিগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বাঁশ শিল্পের কাজ করতেন তার দাদা, তারপর তার বাবা, এখন করেন তিনি। তিনি বলেন, আগে এ এলাকায় প্রচুর বাঁশঝাড় ছিল। সেখান থেকেই এ এলাকার মানুষ এ পেশায় জড়িত। শাহাজাহান বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস তাদের প্রচুর কাজের চাপ থাকে। এই দুই মাস বাঁশশিল্পের সিজন বলেন তিনি। আগে বাঁশের  দাম কম ছিল, তাই তাদের তৈরি জিনিস বিক্রি করে ভালো লাভ হতো। এখন বাঁশ কিনতে হয় বেশি দাম দিয়ে আবার শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় আমরা ভালো লাভ করতে পারছি না। আগে একটা বাঁশের দাম ছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকা, এখন এই বাঁশ কিনতে হয় ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়।

পাকুড়িহাটার মতো, নলডাঙ্গা, আনন্দগঞ্জ, কান্দুনিয়া, দাঁড়াকাটা, রুদ্রবাড়িয়া, সোনাহাটা, বেলকুচি ও বাঁশহাটাসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষের জীবিকার একমাত্র পথ বাঁশের সামগ্রী তৈরি করা। বাঁশ দিয়ে শুধু চাটাই নয়, এখানে আরও তৈরি হয় খলপা, তালাই, ডোল, খালই,  হোচা, বিছন বা হাত পাখা, খাচি বা টোপা আরও অনেক কিছু।

উপজেলার কান্দুনিয়া গ্রামের বাঁশ শিল্পের কারিগর গোলাপি বলেন, সারাদিন সংসারের অন্য কাজের পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করেন। এতে দৈনিক তার প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০  টাকা আয় হয়।

বাঁশ শিল্পের কারিগর গোলাপির স্বামী হারেজ জানান, সংসারে গৃহস্থালি কাজের ফাঁকে বাঁশের পণ্য তৈরি করে যে আয় করে তা সংসারের জন্য উপকার হয়। তার বাড়তি আয় সংসারের ছোটখাট কাজে খরচ করা হয়। গোলাপি বলেন, একটা চাটায় তৈরি করতে তার দুই দিন লাগে। সংসারের  কাজ যেদিন কম থাকে সেদিন এক দিনেও শেষ করতে পারেন চাটায় তৈরি।

যদু মিয়া নামের এক পাইকার বলেন, তার বাড়ি বগুড়ার সদরে। তিনি এসব গ্রাম থেকে পাইকারি দরে এসব পণ্য কিনে নিয়ে গিয়ে বগুড়া শহরের পাটিপট্টিতে বিক্রি করেন। আগে প্রচুর বাঁশের চাটায়ের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় চাহিদা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন স্টিল আর প্লাস্টিকের চাহিদা বেশি বলে তার ব্যবস্থা ও মন্দা যাচ্ছে।

আমজাদ নামের এক কারিগর জানান, বাঁশের তৈরি এসব সামগ্রী জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ বিভিন্ন জেলাতেও যায়। জয়পুরহাট, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, টাঙ্গাইলসহ আশপাশের ব্যবসায়ীরা কিনে নিজ এলাকার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন।

বাঁশের পণ্যের মধ্যে বাজারে চাটাই বিক্রি হয় প্রতি পিস ১৫০-২০০ টাকায়, ঘরের সিলিং প্রতি স্কয়ার ফিট ৩০-৪০ টাকায়। ধান রাখার ডোল বিক্রি হয় আকারভেদে ৪০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। হোচা বিক্রি হয় ১২০ টাকা, ডালি ফলি এসব বিক্রি হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা।