প্রতিনিধি, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে পুকুরের ওপর ১০ হাজারেরও বেশি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ১৪০০ ফুটের মণ্ডপ। ব্যতিক্রমী এই মণ্ডবে স্থান পাবে তিন শতাধিক প্রতিমা। যেখানে তুলে ধরা হবে সনাতন ধর্মের আলোকে বিভিন্ন কাহিনী ও সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র।
ব্যতিক্রমধর্মী এ দুর্গাপূজার আয়োজন করছে জামালপুর ও আলোকদিয়া উত্তরপাড়া সার্বজনীন শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটি। এ পূজা মণ্ডপ দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক লাখ লোকের সমাগম হবে বলে আশা আয়োজকদের। এ আয়োজন চলবে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত।
জানা গেছে, ১০ হাজারেরও বেশি বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে পূজামণ্ডপ। মণ্ডৎে দেবী দুর্গার সঙ্গে স্থান পাবে ৩০০টি প্রতিমা। ৫০ জন শ্রমিক তিন মাস ধরে কাজ করে শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসছেন এই মহাযজ্ঞ। ব্যতিক্রমী এই আয়োজন দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, মণ্ডৎের ভেতরে মেট্রোরেলের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে জš§ নেয়া সনাতন ধর্মের ২০ জন মনীষীর প্রতিমা। মণ্ডপের মধ্যে প্রতিমা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হবে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন বিষয়। দক্ষযজ্ঞ, সতীর দেহ ত্যাগ, সতীর দেহ থেকে ৫১টি তীর্থ ক্ষেত্র, শ্রীকৃষ্ণের কুঞ্জবন ইত্যাদি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানির ওপর বাঁশ দিয়ে ৬টি মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি মণ্ডপে স্থাপন করা হয়েছে প্রতিমা। মণ্ডপে প্রবেশ করে ১৪০০ ফুট হেঁটে শেষ করতে হবে প্রতিমা দর্শন। প্রবেশের সময় চোখে পড়বে শিবের বিশালকৃতির মূর্তি। এরপর মূল প্রবেশ পথ দিয়ে কিছুদূর আগালে দেখা যাবে বড় মন্দির। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে দক্ষযজ্ঞের কাহিনী। দক্ষযজ্ঞ থেকে শুরু করে সতীর পুনর্জš§ ও ৫১টি শক্তিপীঠের কাহিনী সাজানো হয়েছে মূর্তিগুলো দিয়ে। এরপর পুকুরের ওপর তৈরি করা হয়েছে ওভারব্রিজ। ব্রিজের দুই পাশে পানির ফোয়ারার মধ্য দিয়ে সামনের মেট্রোরেলের ভেতরে রাখা হয়েছে ২০ জন মনীষীর প্রতিমা। সেগুলো দেখে সামনে আগালে দেখা যাবে সনাতন ধর্মের আরেক কাহিনী। সেটি শেষ করতে পরের দেখা যাবে কুঞ্জবনে শ্রীকৃষ্ণের শৈশব। এরপর দেবীর ঘটকে বিদায়ের আরেকটি দৃশ্য। শেষে মূল পূজামণ্ডপ।
এরই মধ্যে এই আয়োজন দেখতে আসতে শুরু করেছেন জেলার বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীরা। তাদের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির এ আয়োজন ব্যতিক্রমী।
প্রতিমা তৈরির কারিগর সুজিত কুমার পাল বলেন, তিন মাস ধরে আমরা এখানে কাজ করছি। মহাষষ্ঠীর দিনের আগে শেষ হবে এ কাজ। আমাদের এ আয়োজন হবে দেশসেরা। বাঁশ দিয়ে নির্মিত মন্দিরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মণ্ডপে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে থাকবে মেট্রোরেল, পানির ফোয়ারা।
বাঁশের কাঠামো দিয়ে মণ্ডব তৈরির কারিগর ইউসুফ মিয়া বলেন, আমরা প্রতি বছর ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। করোনার পর এ বছর আবার নতুন করে শুরু করেছি। এখানে সনাতন ধর্মের বিভিন্ন কাহিনী তুলে ধরা হবে। আমাদের আয়োজন চলবে লক্ষ্মীপূজা পর্যন্ত।
আলোকদিয়া দুর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বিশ্বাস বলেন, আমরা প্রতি বছর এখানে ব্যতিক্রমী আয়োজন করি। করোনার পর তিন বছর বড় পরিসরে এ আয়োজন করতে পারিনি। এ বছর আবার শুরু করেছি। এখানে পূজা দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এবারও কয়েক লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হবে। ব্যক্তিক্রমী এ আয়োজনে আমাদের বিশেষ নিরাপত্তা থাকবে। এরই মধ্যে মণ্ডবপ তৈরির ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে ৫০ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
তিনি আরও বলেন, প্রতিমার কাজও শেষের দিকে। ৬টি মণ্ডপ দিয়ে সনাতন ধর্মের কাহিনী ফুটিয়ে তোলা হবে। ভেতরে সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হবে। যেখানে মেট্রোরেলের ভেতরে মাটির তৈরি মনীষীদের প্রতিমা রাখা হয়েছে।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৪৬টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি মণ্ডপে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তবে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের আলোকদিয়া গ্রামে বড় পরিসরে দুর্গাপূজা হবে। সেখানে আমাদের তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জানান, আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির আলোকদিয়া গ্রামের মন্দির কমিটি ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। তাদের আয়োজন সম্পর্কে আমি অবগত রয়েছি। সনাতন ধর্মের কয়েকটি দিক সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেখান থেকে মানুষ সনাতন ধর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে। এই আয়োজন আমাদের সবার জন্য গর্বের।