Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 10:49 am

বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করতে সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের উদ্যোগ

বৈশ্বিক সম্মেলন, ইনসেনটিভ ট্রাভেল, কনভেনশন ও প্রদর্শনীতে (এমআইসিই) পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বাংলাদেশে ‘ইন সিঙ্গাপুর ইনসেনটিভস অ্যান্ড রিওয়ার্ডস (ইন্সপায়ার)’ শীর্ষক একটি প্রোগ্রাম চালু করছে সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড (এসটিবি)। ব্যবসায়িক প্রতিনিধি ও করপোরেটদের মাঝে প্রোগ্রামটি পরিচিত করানোসহ কীভাবে এ প্রোগ্রাম থেকে সুবিধা পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে জানাতে সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড। সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদার হয়ে নির্ধারিত এমআইসিই গ্রুপের প্রতিনিধিদের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্বব্যাপী ইন্সপায়ার প্রোগ্রাম চালু করার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে বিজনেস ট্রাভেল এমআইসিই বা বিটিএমআইসিই ভ্রমণকারীদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে দুই দশমিক ৯ মিলিয়নের বেশি বিটিএমআইসিই পর্যটক সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করতে আসেন, যা ২০১৭ সালের চেয়ে ১২ দশমিক এক শতাংশ বেশি। ২০১৮ সালে ট্যুরিজম রিসিপ্টস আগের বছরের তুলনায় সাত দশমিক দুই শতাংশ বেড়ে চার দশমিক ৬৮ বিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার হয়েছে।

সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ডের ডেপুটি চিফ এক্সিকিউটিভ মেলিসা অ্য বলেন, ২০১৮ সালে বিটিএমআইসিই’র সফলতা অর্জনের পর বৈশ্বিকভাবে ইন্সপায়ার প্রোগ্রামটি চালু করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে করপোরেট গ্রুপের মধ্যে ইন্সপায়ার প্রোগ্রামটি চালু করা হয়। বর্তমানে ইন্সপায়ারের বৈশ্বিক সংস্করণে আমেরিকা, উত্তর এশিয়া, ওশেনিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশের বাজারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সিঙ্গাপুরের দেশীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তায় সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড এমআইসিই পর্যটকদের চাহিদা বিবেচনা করে দলবদ্ধভাবে ভ্রমণের কিছু অভিজ্ঞতা নির্বাচন করেছে। এর মধ্যে খাবার থেকে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ ও দর্শনীয় স্থান থেকে একসঙ্গে দল গঠনের সুবিধা রয়েছে। দলবদ্ধভাবে ভ্রমণকে উৎসাহ দেওয়ার পাশাপাশি পর্যটকেরা যাতে সিঙ্গাপুরে ভ্রমণের অনন্য অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন, সেজন্য এ সুবিধাগুলোকে ইন্সপায়ারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ট্যুরিজম রিসিপ্টসে দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ, বিনোদন ও গেমিং (এসইজি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

এমআইসিই মিটিংকে সমৃদ্ধ করছে ইন্সপায়ার

আমেরিকান এক্সপ্রেসের ২০১৯ সালের বৈশ্বিক মিটিং ও ইভেন্ট ফোরকাস্ট রিপোর্টে বলা হয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের যুক্ত করার মধ্যে মিটিংয়ের সর্বোচ্চ ফল অর্জনের উপায় নিহিত রয়েছে। পরিকল্পনাকারীরা অধিবেশনগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি অংশগ্রহণকারীদের সর্বোচ্চভাবে যুক্ত করার জন্য স্থান, যোগাযোগ, নেটওয়ার্কিং, কন্টেন্ট ও প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে।

এছাড়া ২০১৯ সালের সিডাব্লিউটি মিটিং ও ইভেন্টস ট্রেন্ডস রিপোর্ট অনুসারে, অধিবেশন ও ইভেন্টের বৈশ্বিক চাহিদা পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। কেননা ইভেন্টের মাধ্যমেই অংশগ্রহণকারীরা একে অপরের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা, কথোপকথন ও নেটওয়ার্ক বাড়াতে পারেন। এ ইতিবাচক দিকগুলো বিবেচনা করে ইন্সপায়ারকে বৈশ্বিক পর্যটকদের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, এমআইসিই’র সদস্যরা সিঙ্গাপুরের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান ও লাইফস্টাইল উপভোগ করতে সিঙ্গাপুর ভ্রমণে আগ্রহী হবেন।

সিঙ্গাপুরকে উপস্থাপন

বৈশ্বিক ইন্সপায়ার প্রোগ্রামটিতে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ছোট ও মধ্যম আকারের এমআইসিই গ্রুপের পর্যটকদের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা নির্বাচন করা হয়েছে। প্রোগ্রামটিতে ৬৩ ধরনের অভিজ্ঞতাকে চারটি বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো সিঙ্গাপুরের খাবার, বিনোদন ও রাতের জীবন, থিম্যাটিক ট্যুর ও শেখার অভিজ্ঞতা এবং আকর্ষণীয় ও স্বতন্ত্র টিম তৈরির কার্যকলাপ।

খাবারের কথাই ধরুন, ইউনেস্কো-ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য ও সিঙ্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র বোটানিক গার্ডেনে পর্যটকদের পছন্দ অনুযায়ী গুল্ম ও মসলা দিয়ে তৈরি খাবার পাওয়া যায়। আবার কোনো পর্যটন গ্রুপ যদি সিঙ্গাপুরের সিলিকন ভ্যালি সফরে আগ্রহী হয়, তাহলে তারা ওয়ান নর্থ এলাকায় ভ্রমণ করতে পারে। এখানে ব্যবসায়িক আইকনদের নিয়ে নানা স্টার্টআপ সম্বন্ধে সেশনের আয়োজন করা হয়। যেসব পর্যটক সিঙ্গাপুরের বিখ্যাত সবুজ ভূমির সৌন্দর্য দেখতে চান তারা সমুদ্রের পাশের বাগানগুলোয় র‌্যাপসোডি শো উপভোগ করতে পারেন। ওসিবিসি স্কাইওয়ে থেকে সাগরের পাশের এ স্থানগুলোয় রাতে শহরের অতুলনীয় ও মনোরম রূপ উপভোগ করা যায়।

যেসব অধিবেশন ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে

সিঙ্গাপুরের বিটিএমআইসিই ক্ষেত্রটি ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী হচ্ছে। যেসব বড় ইভেন্ট ও অধিবেশন এ শহরে আয়োজন করা হবে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভিডকন এশিয়া, হোম ডেলিভারি এশিয়া, ডেলয়েট অল হ্যান্ডস মিটিং ও বেন্টলে সিস্টেমস ইয়ার ইন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কনফারেন্স। ভিডকন হলো অনলাইনে যারা কনটেন্ট তৈরি করেন, তাদের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট।

২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুর বিশ্বের ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি প্রফেশনালদের সমবেত হওয়ার সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডমার্ক অ্যাসোসিয়েশনের ১৪২তম বার্ষিক অধিবেশনের আয়োজন করবে। অধিবেশনে আট হাজার প্রতিযোগী অংশ নেবে। ২০২০ সালে সিঙ্গাপুরে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে প্রায় ২০ হাজার বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন, যা এ নগররাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় অ্যাসোসিয়েশন সমাবেশে পরিণত হবে। এসএপি ফিল্ডের কিক অব মিটিং পরপর দুই বছর ২০২০ ও ২০২১ সালে এখানে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া এশিয়া প্যাসিফিকের লাইফ ইন্স্যুরেন্স সমাবেশ ও মিলিয়ন ডলার বৈশ্বিক কনফারেন্সের গোলটেবিল বৈঠক টেবিল ২০২১ সালে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হবে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

২০২২ সালে সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া প্রথমবারের মতো মেডিকেল ইমেজ কম্পিউটিং ও কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড ইন্টারভেনশনের (এমআইসিসিএআই) আন্তর্জাতিক কনফারেন্স যৌথভাবে আয়োজন করবে। এ খাতের পেশাজীবীদের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে এটি। এতে প্রায় দুই হাজার প্রতিনিধি অংশ নেবে। ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত ২৫তম বিশ্ব ডারমাটোলজি সমাবেশের স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে

সিঙ্গাপুর। এখানে অনুষ্ঠিত মেডিকেল খাতের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে এটি। এতে অংশ নেবেন প্রায় ১৫ হাজার প্রতিনিধি।

সিঙ্গাপুরে সৃজনশীল ব্যবসার উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। নগররাষ্ট্রটি গতিশীল ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে। প্রিমিয়ার ব্যবসায়িক ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হওয়ার কেন্দ্রস্থল হিসেবে বিখ্যাত স্থান এটি।

ইন্সপায়ারের জন্য আবেদন

এমআইসিই গ্রুপের সদস্য যারা চলতি বছরের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করবেন তারা ইন্সপায়ার প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এ গ্রুপে সর্বনি¤œ ২০ বিদেশিকে অংশ নিতে হবে এবং তাদের সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে তিন দিন অবস্থান করতে হবে। আগ্রহী গ্রুপকে ২০২১ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে।

ইন্সপায়ার সম্বন্ধে আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন িি.িারংরঃংরহমধঢ়ড়ৎব.পড়স/ সরপব/রহংঢ়রৎব ওয়েবসাইটটি।

সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড

সিঙ্গাপুর ট্যুরিজম বোর্ড (এসটিবি) সিঙ্গাপুরের অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম উৎস পর্যটন খাতের প্রধান উন্নয়নমূলক এজেন্সি। দেশটির পর্যটন খাতকে গতিশীল করতে বোর্ডের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।