বাংলাদেশিদের ভারতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদ-পরবর্তী মে মাসে দেশের ভেতরে ও বাইরে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন হোঁচট খেয়েছে। গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে সার্বিক লেনদেন কমেছে প্রায় ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ সময় দেশের ভেতরের চেয়ে দেশের বাইরে লেনদেন কমার হার ছিল বেশি। এ হার প্রায় ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বিদেশে বাংলাদেশিরা সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ করেন ভারতে। তবে দেশটিতে টানা তিন মাস ধরে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ডলার খরচ কমছে।

খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ-পরবর্তী মাসে সব ধরনের লেনদেন স্থির হয়ে যায়। কারণ মানুষ ঈদকে কেন্দ্র করে বেশি খরচ করে থাকে। তাই পরবর্তী মাসে ওই নিয়মে খরচ হয় না। স্বাভাবিকভাবে অন্য মাসে যেভাবে খরচ হয়, সেভাবে খরচ হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাম্প্রতিক ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারতবিরোধী এক ধরনের প্রচারণা লক্ষ করা যাচ্ছে। সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের পণ্যসহ দেশটিকে ‘বয়কট’ নিয়ে করা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। ভারতে কার্ডের ব্যবহার হ্রাসে এরও একটি প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় পণ্য কিনে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের মে মাসে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় হয় দুই হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসে ব্যয় কমেছে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। তথ্য বলছে, মে মাসে বিদেশে বাংলাদেশিদের সার্বিকভাবেও ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় কমেছে। এপ্রিলে বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে ৫০৬ কোটি টাকা ব্যয় করেছিলেন। মে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যয় কমেছে বা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সবমিলিয়ে মে মাসে দেশের ভেতরে ও বাইরে তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়, যা এপ্রিলে ছিল তিন হাজার ২৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ লেনদেন কমেছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। গত মার্চ থেকে ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে অর্থ ব্যয় কমেছে। তবে এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে লেনদেন বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিভাগের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, মে মাসে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় কমেছে সৌদি আরব ও ভারতে। গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে কানাডা ও ভারতে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৮৬ ও ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে ভারতে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশিরা ৭৬ কোটি টাকা খরচ করেছে। গতে এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল ৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ অর্থ ব্যয় কমেছে। আর লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ৩৩ হাজার ৬৩৬টি। মে মাসে ভারতে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের লেনদেনের সংখ্যা ছিল ৮৬ হাজার ১৫০ বার। গত এপ্রিলে এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৯ হাজার ৭৮৬ বার। অর্থাৎ এক মাসে লেনদেনের সংখ্যা কমেছে ২৮ শতাংশের বেশি। এছাড়া ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে লেনদেন কমে ২ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মার্চের তুলনায় এপ্রিলে কমে ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

এদিকে মে মাসে থাইল্যান্ডে ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ, আরব আমিরাতে ১৮ দশমিক ০২ শতাংশ, মালয়েশিয়া ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ, সিঙ্গাপুর ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় কমেছে। তবে এ সময় অর্থ ব্যয় বেড়েছে বাংলাদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, কানাডায় ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, আয়ারল্যান্ডে ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ ও নেদারল্যান্ডসে ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

অন্যদিকে মে মাসে বাইরে থেকে ইস্যু করা অর্থাৎ বিদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশে লেনদেন করা কমিয়েছে প্রায় ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ। গত এপ্রিলে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১৯০ কোটি টাকা, যা মে মাসে কমে হয়েছে ১৬৯ কোটি টাকা।

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের অভ্যন্তরে, বাইরে ও দেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরগুলোয়। দেশের অভ্যন্তরে এ খাতে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪০১ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৫১ দশমিক ০৯ শতাংশ। এছাড়া খুচরা কেনাকাটায় ১৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ, নগদ উত্তোলনে সাত দশমিক ০৫, পোশাক কেনাকাটায় ৪ দশমিক ০৮, ওষুধ ও ফার্মেসিতে পাঁচ দশমিক ৫১, পরিবহন খাতে তিন দশমিক ২০, অর্থ স্থানান্তরে তিন দশমিক ৩০, ব্যবসায় এক দশমিক ৯৭, পেশাগত সেবায় দশমিক ৭১ ও সরকারি সেবায় দশমিক ৪১ শতাংশ লেনদেন হয়।

এছাড়া বিদেশে প্রায় ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ডিপার্টমেন্ট স্টোরে। অন্যান্য ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে খুচরা ক্রয়সেবায় ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ওষুধ ও ফার্মেসিতে ১৩ দশমিক ০৭, নগদ উত্তোলন ৫ দশমিক ৮৭, পোশাক কেনাকাটায় আট দশমিক ১২ ও পরিবহন খাতে ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। মে মাসে অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের এবং দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকদের লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে। দেশের অভ্যন্তরে ভিসা কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৯৭০ কোটি টাকা, যা অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ৭১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে মাস্টারকার্ড। এর মাধ্যমে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ লেনদেন হয়। বাকি ১০ দশমিক ৪২ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অন্যান্য কার্ডের মাধ্যমে।

দেশের বাইরে ভিসা কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৫৪ কোটি টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭৭ দশমিক ৭০ শতাংশ। মাস্টারকার্ডে লেনদেনের হার ছিল ১৩ দশমিক ৮১ ও অন্যান্য কার্ডে ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। আর দেশের অভ্যন্তরে বিদেশি নাগরিকরা ভিসা কার্ডের মাধ্যমে ১০১ কোটি টাকা লেনদেন করে, যা মোট লেনদেনের ৫৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। মাস্টারকার্ডে ৩৯ দশমিক ৫৩ ও অন্যান্য কার্ডে শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ লেনদেন হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০