বাংলাদেশের অর্থনীতি: ঝুঁকি উদ্যোগ ও সক্ষমতা

আবুল কাসেম হায়দার: আমাদের অর্থনীতি একটি কঠিনকাল অতিক্রম করছে। করোনা-পরবর্তী অর্থ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু ইতোমধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অর্থনীতিতে নতুন করে অশনি সংকেত বার্তা দিচ্ছে। চীনে করোনা বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ও রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য উৎপাদন খাতে ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের অর্থনীতি সক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এক দিকে করোনা অন্য দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদের সক্ষমতা বেশ হ্রাস পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ার গতি কিছুটা কমেছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে পড়েছে। তাই টাকার মান কমে যাচ্ছে।

ব্যাংকের আমানত অবস্থা: বেশ কিছুদিন ধরে দেশে আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে আমদানি ব্যয় আরও বাড়বে। দেশে বেশ কিছু খাতে নতুন করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ব্যাংকের ওপর বেশ চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ব্যাংক ডলার সংকট রয়েছে। আমদানি ব্যয় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তাই টাকার মান কমছে। ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ কম এবং ঋণ প্রবাহ বাড়ায় তারল্য সংকট মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাড়তি তারল্যের জোগান দিতে গিয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গিয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ: বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বর ’২১ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৬১৪ কোটি ডলার, যা গড়ে দেশের ৫ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান। গত সেপ্টেম্বরের ’২১ রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৬২০ কোটি ডলার, যা ওই সময়ে ৬ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান ছিল। এর আগে করোনার আগে ২০১৯ সালের নয় মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমান রিজার্ভ ছিল। গত ২৩ মার্চ ’২২ রিজার্ভ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার, যা দিয়ে দেশের ৫ মাসেরও কম আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে ঝুঁকির মাত্রা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে আমদানি ও কর্মসংস্থানজনিত ঝুঁকি অধিক বেশি। এই অবস্থায় রিজার্ভ বেশি থাকলে, ব্যাংকের তারল্য প্রবাহ বেশি থাকবে, বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ বাড়লে ঝুঁকি মোকাবিলা সহজ হবে। কিন্তু এখন এগুলো হচ্ছে না।

আমদানি ব্যয় প্রসঙ্গে: এখন বৈদেশিক মুদ্রার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমিয়ে আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ব্যাংকে সঞ্চয় বৃদ্ধি করে তারল্য বৃদ্ধি করতে হবে। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাতে চাঙা করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে দরিদ্রপ্রবণ এলাকায় অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। গত অর্থবছরের একই সময় জুলাই-জানুয়ারির তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ বেশি। দেশের মোট আমদানির ৬০ শতাংশ পূরণ করে রপ্তানি আয়ের অর্থ থেকে। তাতে ৪০ শতাংশ পূরণ করা হয়  রেমিট্যান্স (প্রবাসী-আয়) থেকে। সাম্প্রতিক সময় রেমিট্যান্সপ্রবাহ কম। তাই আমদানিব্যয়সহ অন্যান্য খরচ পূরণ হচ্ছে না। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের জোগান দিতে হচ্ছে। আমদানি ব্যয় পূরণ করতে গত ৯ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩৭৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের জোগান দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের মতে অর্থনীতিতে ঝুঁকির প্রবণতা বেশি হলে কমপক্ষে ৫ মাসের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। আমদানি ব্যয় পূরণের জন্য রিজার্ভ থাকতে হয়। আমদানি ব্যয় পূরণের জন্য রিজার্ভ ও আমাদের বেশি প্রয়োজন। কেননা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ প্রায় সব পণ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে বছরের রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ। কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৪৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ঘটেছে। গত বছর জুলাই-ফেব্রুয়ারিতে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি বেড়েছিল ৩৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময় কমেছে ২০ শতাংশ। ফলে সার্বিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় কম হয়েছে। অন্য দিকে আমদানি খাতের চলতি ব্যয়সহ বকেয়া দেনা পরিশোধ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ভ্রমণ খাতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় বাড়ায় সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত অর্থ বছরের জুলাই-জানুয়ারি পর্যন্ত চলতি হিসাব উদ্ধৃত ছিল ১৫৫ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময় ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৬ কোটি ডলার। এতে বিনিময় হারে চাপ পড়েছে।

টাকার মান: বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের দাম ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করেছে। তবে অনেক ব্যাংক রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিল নগদায়ন করছে প্রতি ডলার ৯৪-৯৫ টাকায়। আর সেই ডলার আমদানিকারকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে ৯৫-৯৬ টাকা। ফলে আমদানি পণ্যের দাম ইতোমধ্যে বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানও নিয়মিত তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করছে। ফলে বাংলাদেশকেও টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে।

ঋণের প্রবাহ : গত বছরের ডিসেম্বরে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ৮৩ দশমিক ৭০ শতাংশ ছিল বেসরকারি খাতের। গত ডিসেম্বরে তা কমিয়ে ৮২ দশমিক ৪৫ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ জিডিপিতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অনেক বেশি। মোট কর্মসংস্থানের মাত্র ৫ শতাংশ সরকারি খাতের। বাকি ৯৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের।

পণ্যের সরবরাহ: করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় এক বড় সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। পণ্যের বহন ব্যবস্থায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সমুদ্র, আকাশ ও স্থল পথে ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে সহজে, সস্তায়, সব সময় জাহাজ ভাড়া পাওয়া  যায় না। তাই পণ্য আমদানিতে ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের মূল্যের অস্থিরতার কারণে বাংলাদেশের মতো জ্বালানি তেল আমদানিকারক দেশের অর্থনীতিতে সম্প্রতি নতুন ধরনের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতি যে নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন সংকট সৃষ্টির ঝুঁকি রয়েছে।

কিছু নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ: এই পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রার অনাকাক্সিক্ষত ব্যয় দ্রুত কমিয়ে আয় বৃদ্ধি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ছোট ও মাঝারি শিল্পকে চাঙা করে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশের দরিদ্রপ্রবণ এলাকাগুলোতে অর্থনৈতিক নতুন কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় শ্রমনির্ভর রপ্তানি পণ্যের পরিবর্তে মেধানির্ভর রপ্তানি পণ্যে গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমদানি-নির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শ্রীলঙ্কা থেকে শিক্ষা : দক্ষিণ এশিয়ার সম্ভাবনাময় দেশ শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দেয়ায় তখন সেই দেশ নিয়ে সারা বিশ্বজুড়ে আলোচনার তুফান চলেছে। অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত শ্রীলঙ্কার অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, দেশটিতে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দৈনিক ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং থাকছে। ফলে বিক্ষোভে মানুষ রাস্তায়। এখন অবশ্য এই ভয় বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা কিছুটা ভালো। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলঙ্কা থেকে অনেক ভালো। এছাড়া এখনও জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ সহনীয় রয়েছে। তাই আমাদের অবস্থা উত্তরণের জন্য অনেক বেশি সতর্ক, স্বচ্ছ হতে হবে।

বাংলাদেশে মেগা প্রকল্প: বাংলাদেশে তখন প্রচুর মেগা প্রকল্পের কাজ চলেছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনও রয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। এতে করে দেশে জিডিপিও বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেগা প্রকল্পগুলো মূলত যোগাযোগ ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য নেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পারমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা সমুুদ্র বন্দর ও গভীর সমুদ্রবন্দর অন্যতম। এর মধ্যে পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য সব প্রকল্প বৈদেশিক ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ঋণ পরিশোধের সাশ্রয় এখনও আসেনি। এখনও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আমাদের ৩৮ শতাংশ। আইএমএফের মতামত অনুযায়ী বৈদেশিক ঋণ ৫৫ শতাংশের বেশি হলে সংকট তৈরি হতে পারে। গত বছর অর্থাৎ ২০২১ জুন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের এই হার জিডিপির ১৩ শতাংশ। নগর পরিকল্পনাবিদেরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, প্রস্তাবিত ঢাকা সাবওয়ে  প্রকল্প গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মইনুল ইসলাম কোনো ভণিতা না করে আটটি অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প চিহ্নিত  করেছেন। ১.  ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বুলেট ট্রেন। ২. দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। ৩. পূর্বাচলে ১১০ তলাবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বহুতল ভবন কমপ্লেক্স।  ৪. শরীয়তপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ৫. পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। ৬. নোয়াখালী বিমানবন্দর। ৭. দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প। ৮. ঢাকার বাইরে রাজধানী স্থানান্তর (সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প  মনে হয় তার দৃষ্টি এ এড়িয়ে গেছে)। মেগা প্রকল্পগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিয়াজ আসাদুল্লাহ।  সিডিপির অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, দুই দেশের পরিস্থিতি তুলনীয় নয়, তবে এতে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। তারা কেউই মূর্খ নন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তাদের হাতে স্ফটিক গোলক নেই, যা দেখে কী ঘটবে। তা নিশ্চিতভাবে বলে দিতে পারেন। তারা যা বলবেন, সব সময়  যে তাই ঘটবে, এমনও নয়। তবে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে তারা তথ্য- উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কী হতে পারে, তা অনুমান করবেন ও পরামর্শ দেবেন।  এটাই তাদের দায়িত্ব এবং তা তারা পালন করছেন। তারা শিক্ষা নিতে বলেছেন, সাবধান হতে বলেছেন।

সতর্ক থাকতে হবে: যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সেগুলো থেকে যে আয় আসবে তার প্রাক্কলন এবং সেগুলোর ঋণ পরিশোধের প্রাক্কলনের মধ্যে যেন সামঞ্জস্য থাকে তা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। এক দিনে শ্রীলংকার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সময় লেগেছে। তাই যেকোনো উন্নয়নশীল দেশকে কঠোর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে, যখন আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে, আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের বৈদেশিক বিনিময় হার যেন স্থিতিশীল থাকে।

আমদানি যেন সময়মতো করা হয়। একই সঙ্গে আমাদের পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্যকরণের দিকে বেশি নজর দিয়ে এক্সচেঞ্জ ব্যয় ম্যানেজমেন্ট করা উচিত। তবে এখনও আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেকটা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে আমাদের প্রকল্পের সংখ্যা অনেক বেশি। এক কথায় যে খুব ভালো তা বলা যাবে না। তবে যে প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে নিশ্চিত বলা মুশকিল।

প্রকল্প বাস্তবায়ন ঠিক সময়মতো, সাশ্রয়ী ও দুর্নীতিমুক্তভাবে শেষ করা যায় সেই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। সব মেগা প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে। মেয়াদ বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ব্যয় বৃদ্ধি হলে দুর্নীতিও বাড়বে। এসব মেগা প্রকল্প থেকে ঋণ পরিশোধ করা, যাকে অর্থনীতির ভাষায় বলা হয় আইইআর (ইন্টারনাল রেট অব রিটার্ন, ইকোনমিক রেট অব রিটার্ন ও ফিন্যান্সিয়াল রেট অব রিটার্ন) এইগুলো যেন ঠিকমতো আসে সেই দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। তাই প্রয়োজন সুশাসন, আইনের শাসন।

প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হতে হবে। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প নেয়া ঠিক হবে না। আয় বুঝে প্রকল্প নিতে হবে। সময়ক্ষেপণ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না। সময় এই ক্ষেত্রে অর্থ। অর্থ সাশ্রয় যেন হয় নজর রাখতে হবে।

আরেকটি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে যেন সব প্রকল্পের ঋণ শোধের সময় একই সঙ্গে না হয়। আগে-পরে ঋণ শোধের সময় থাকতে হবে।

এখন থেকে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বৃদ্ধির চেষ্টা বাড়াতে হবে। রিজার্ভ থেকে খরচের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। অপ্রয়োজনীয় খাতে রিজার্ভ থেকে খরচ করা ঠিক হবে না। আগামী দিনে আরও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকট আসতে পারে। সে চিন্তা মাথায় রেখে অর্থনৈতিক সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরে আনতে হবে। দুর্নীতি, ঘুষ, অনিয়মের লাগামকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। সব প্রকল্পে সৎ, নিষ্ঠাবান, চরিত্রবান ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা সত্যিকার অর্থে নিশ্চিত করতে হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের অপসারণ করে সৎ, চরিত্রবান, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক ব্যক্তি নিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। বিদেশে অর্থ পাচার রোধ করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ব্যক্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যেকোনো পর্যায়ে নিয়োগ থেকে বিরত থাকা খুবই জরুরি। রাজনৈতিক অর্থনীতি কৌশল থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। অর্থনীতিকে তার নিজস্ব নীতি ও আদর্শে চলার যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, আইএফআইএল, অস্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও  আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ, সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম

aqhaider@youthgroupbd.com

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০