ক্রীড়া প্রতিবেদক: অনেক দিন ধরেই টেস্টে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে বাংলাদেশ। এখান থেকে বের হতে অবশ্য চেষ্টার কোনো কমতি করছে না টিম টাইগার্স। কিন্তু মাঠের ক্রিকেটে একের পর এক ব্যর্থতার গল্পই লিখতে হচ্ছে মুমিনুল হকদের। তবে ঘরের মাঠে আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট থেকে শুরু হতে যাওয়া একমাত্র টেস্ট ম্যাচে সেটা ফের হোক চান না তারা। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো ও অধিনায়ক মুমিনুল হকের কণ্ঠে এমন বাণীর কথা শোনা গেল।
টেস্ট মানেই বাংলাদেশের জন্য কঠিন পরীক্ষা, যা অনেক দিন ধরেই মাঠের পারফরম্যান্সে দেখা যাচ্ছে। এ কারণে মুমিনুল হকের দল পড়েছেন সমালোচনায়, যা আরও বেশি হয়েছে এ মাসে পাকিস্তান সফরে সিরিজের প্রথম টেস্টে বাজেভাবে হেরে। এ অবস্থার পরিবর্তন হতে অবশ্য সময় চাইছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। একই সঙ্গে তিনি আশা করেছেন, ঘরের মাঠেই ঘুরে দাঁড়াবে দল।
বর্তমান বাংলাদেশ দলে যারা খেলছেন, তাদের বেশিরভাগেরই টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা বেশ কম। নাজমুল হোসেন শান্ত, এবাদত হোসেন, আবু জায়েদ রাহী কিংবা সাইফ হাসান কেউই এখন পর্যন্ত ১০টি টেস্ট খেলেননি। এই অনভিজ্ঞ দলটি নিয়েই ভারত ও পাকিস্তানের মতো দেশের বিপক্ষে লড়েছে বাংলাদেশ। তাই লাল-সবুজদের পাশে সমর্থকদের থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ডমিঙ্গো। গতকাল এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলটি বেশ অনভিজ্ঞ। মিডিয়াকে ক্রিকেটারদের প্রতি ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদের সুযোগ দিতে হবে। বিশ্বের সবচাইতে অনভিজ্ঞ দল এটা। এই দল নিয়ে যদি আপনি ভারত ও পাকিস্তানের মতো দলের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করেন এক দিনের প্রস্তুতি নিয়ে সেটা অনেক কঠিন। তাই ছেলেদের প্রতি ধৈর্য রাখতে হবে। এখানে দর্শক ও মিডিয়ার সমর্থন অনেক জরুরি।’
তরুণ ক্রিকেটারদের প্রতি আস্থা না হারানোর জন্য অনুরোধ করে ডমিঙ্গো আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেটের জন্য পাগল। একই সঙ্গে মিডিয়ার সম্পৃক্ততা অবিশ্বাস্য। দল তাদের (সমর্থক) প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো খেলতে পারছে না। তবে মানুষকে বুঝতে হবে যে, আমাদের দলটি অনেক তরুণ। আপনি বর্তমান টেস্ট দলটিকে দেখুন। শান্ত তিনটি টেস্ট খেলেছে, সাইফ দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামছে। রাহীকে দেখতে ৪০-এর মতো মনে হলেও সে মাত্র সাতটি টেস্ট খেলেছে। এটি খুবই অনভিজ্ঞ একটি টেস্ট দল। আপনার যে অধিনায়ক আছে, সে ভারত ও পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে অধিনায়কত্ব করেছে।’
সম্প্রতি বাজে সময় পার করলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ভালো করবে বাংলাদেশÑএমন মন্তব্য করেছেন টাইগারদের টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক। মুশফিকুর রহিম দলে ফেরায় আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি, ‘দেখেন একটা দলে সিনিয়র ক্রিকেটার না থাকা মানে দুশ্চিন্তা থাকা। সে হিসেবে চিন্তা করলে আমার কাছে মনে হয় মুশফিক ভাই আসছেন, অধিনায়ক হিসেবে যা অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক আমার জন্য। আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ছে।’
তবে সাম্প্রতিক সময়ে তামিম, মুশফিকরা ঘরের মাটিতে যে ক্রিকেট উপহার দিয়ে আসছেন, তাতে পা হড়কানোর আশঙ্কা কিন্তু প্রবল। এই তো গত বছরের সেপ্টেম্বরের কথা, টেস্ট ক্রিকেটে মাত্রই জš§ নেওয়া আফগানদের কাছেও ২২৪ রানের বড় ব্যবধানে উড়ে গেল সাকিব আল হাসান অ্যান্ড কোং। তার আগের বছর জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে টিম টাইগার্স পা হড়কেছিল ১৫১ রানে।
শক্তির বিচারে জিম্বাবুয়ের চেয়ে বেশ এগিয়ে বাংলাদেশ, যদিও টেস্ট পরিসংখ্যানে এগিয়ে সফরকারীরা। তবে ব্যাপারটিকে আজ মনে করতে চাইছে না স্বাগতিকরা। তাদের চোখ আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম কোনো ম্যাচে জেতা। এ ব্যাপারে মুমিনুল বলেন, ‘আমি যখনই যে দলের বিপক্ষেই নামি, সব সময় জেতার জন্যই নামি। আর এই ম্যাচটাও জেতার জন্যই নামব। অবশ্যই আশাবাদী, আশা না থাকলে তো হবে না। সঙ্গে বিশ্বাসও আছে। ইনশাআল্লাহ কালকে ভালো ক্রিকেট খেলব বলে আমরা আশাবাদী।’
এখন পর্যন্ত ১৬টি টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে। এর মধ্যে জিম্বাবুয়ের জয় সাতটিতে। আর বাংলাদেশের ছয়টি। বাকি তিন টেস্ট ড্র। তবে দেশের মাটিতে ৯ ম্যাচের পাঁচটিতে জয় আছে টাইগারদের। যদিও সাদা জার্সিতে খুবই বাজে সময় পার করছে বাংলাদেশ দল। সবশেষ ছয় টেস্টে হেরেছে দল, যার মধ্যে পাঁচটিতেই ইনিংস ব্যবধানে। তাই ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া মুমিনুল-মুশফিকরা।
দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে বাংলাদেশের চিন্তার জায়গার নাম সব সময় ব্যাটিং, গত বেশ কয়েকটি সিরিজে যা আরও বেশি করে দেখা গেছে। ঘরের মাঠে আজ আর সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখে পড়তে চায় না স্বাগতিকরা। এজন্য বেশ সতর্ক তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, মুশফিকুর রহিমরা। এদিকে বলহাতে আজ জ্বলে উঠতে তৈরি তাইজুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী।