বাংলাদেশের কাছে এডিবির পাওনা ১১.৬৯ বিলিয়ন ডলার: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, গত ৫১ বছরে বাংলাদেশ কখনই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। বর্তমানে এডিবির কাছে বাংলাদেশের মোট বকেয়া ১১.৬৯ বিলিয়ন ডলার। জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম। গতকাল মঙ্গলবার ম্যানিলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সদর দপ্তরে বার্ষিক সভায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়ার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির ক্রমবর্ধমান অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ২৭.৬ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে মোট বকেয়া ১১.৬৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ সক্ষমতার সঙ্গে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে। বাংলাদেশের ৫১ বছরের যাত্রায় কখনোই দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়নি। জিডিপি অনুপাতে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম ঋণের দেশের মধ্যে অন্যতম। তিনি বলেন, এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকট পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোকে দ্রুত ভ্যাকসিন ও ব্যয় সহায়তা দিয়ে সাহায্য করেছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাংলাদেশ-এডিবি কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি (২০২১-২০২৫), বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ও লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে। যা আগামী পাঁচ বছরে আমাদের জন্য ১২-১৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার জোগান থাকবে বলে আশা করা যায়। আমাদের উন্নয়নের মাইলফলক অর্জনে এডিবির ক্রমাগত সমর্থন বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশর সক্ষমতা ও অগ্রগতি তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সব আর্থ-সামাজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সম্প্রদায়ের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ গত ১৩ বছরে গড়ে ৬.৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারি এবং বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক সংকটের কারণে, খাদ্য, জ্বালানি, সার, এবং আর্থিক সংকট বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করেছে এবং সারা বিশ্বে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা নিশ্চিত করার জন্য, আমাদের এডিবি থেকে বাজেট সহায়তার পাশাপাশি নীতিভিত্তিক ঋণ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী এডিবির বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন এবং বাংলাদেশও এডিবি সদর দপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে বলে আশা ব্যক্ত করেন। তিনি আরও বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে আশা করি যে এডিবি এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশেষ করে বাংলাদেশকে জলবায়ু অভিযোজন, প্রশমন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে অসহায় মানুষকে সাহায্য করার জন্য গতিশীল ভূমিকা পালন করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের দুর্বলতা মোকাবিলায় মিশ্র অর্থায়নের পরিবর্তে নমনীয় ঋণ সহায়তা হবে বাস্তবসম্মত পদ্ধতি। এছাড়া এডিবি চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়ে আইসিটি ভিত্তিক উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ, স্থিতিস্থাপক স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং মানসম্পন্ন অবকাঠামোর কৃষি প্রবর্তনে তার উদার সহায়তা প্রসারিত করতে পারে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী বছর বাংলাদেশ ও এডিবির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ২০২৩ সাল আমাদের অংশীদারিত্বের ৫০তম বার্ষিকী হবে।

৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১৬৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি নাগরিকের পক্ষ থেকে এডিবি প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফর এবং ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রেসিডেন্ট মাসাতসুগু আসাকাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও সক্ষমতার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের সক্ষমতার একটি প্রতীক। এজন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের বিশেষ প্রশংসা করেন। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট স্বাস্থ্যগত ও আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাংলাদেশ গৃহীত পদক্ষেপ এবং টিকা কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন তিনি।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই বাংলাদেশের প্রতি এডিবির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এবারের বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে সেগুলোও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। করোনা মহামারি কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে এডিবি শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে থেকে সহযোগিতা করছে এবং ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের পাশে সবসময় এডিবি থাকবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০