বাংলাদেশের নেতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে লজ্জায় প্রবাসীরা

হামিদুর রহমান, দুবাই থেকে ফিরে: সংযুক্ত আরব-আমিরাতে ১৯২ দেশের অংশগ্রহণে চলছে ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’। বিশ্বের কাছে নিজেদের অবস্থান, সংস্কৃতিসহ সব বিষয়ে জানান দিতে জমজমাট সব প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে দেশগুলো। জমজমাট আয়োজনেরও কমতি নেই দেশগুলোর। কেবল চোখে পড়ার মতো বড় কোনো আয়োজনই নেই বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে। দেশের নেতিবাচক এমন ব্র্যান্ডিংয়ে লজ্জায় পড়েছেন প্রবাসীরা।

দিনের আলো শেষে রাতের আঁধার নামতেই এক্সপোতে দেখা নানা রঙের আলোর ঝলকানি। কৃত্রিম আলোর বাহারের সঙ্গে ১৯২ দেশের ভিন্নরকম প্রদর্শনী হয়ে ওঠে চোখ ধাঁধানো। আছে নানা রকম বিনোদনের ব্যবস্থা, কনসার্ট আর নাচ। সবকিছু মিলিয়ে এক বৃত্তে যেন ১৯২ দেশের বাস। এ যেন এক বৃত্তে পুরো পৃথিবী দেখছে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা।

সম্প্রতি সরেজমিন মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দেশের প্যাভিলিয়নগুলো অনেক বড় পরিসরে বিশেষভাবে সাজানো আর প্যাভিলিয়নের সামনেও স্টেজ সাজিয়ে গানের আসরসহ চলছে বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নটি ছোট পরিসরে ভেতরে কাপ, মগ, ব্যাগ ও কিছু পাটপণ্যর জিনিস রাখা। আর ভেতরে টানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। তবে প্যাভিলিয়নের অবস্থা দেখে অনেকেই অভিযোগ তুলেছে নামমাত্র এমন প্যাভিলিয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি দিয়ে তাদের অপমান করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে স্বাগতম জানানোর লোকটিও নেই। মাত্র দুই থেকে তিনজন লোক দিয়ে চলছে প্যাভিলিয়ন। এটি সত্যিই লজ্জার।    

প্রাঙ্গণে ঘুরতে আসা কয়েকজন বাঙালি প্রবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খাবারের প্লেটটিই ভাঙা হয় তাহলে খাবেন কীভাবে! এ ধরনের মেলায় সাধারণত দেশের অবস্থান, সংস্কৃতি ও নানা উন্নয়নের গল্প ফুটিয়ে তোলা হয় প্যাভিলিয়নে। অন্যান্য দেশের প্যাভিলিয়নের সামনে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নটি যেন সত্যিই একটি অসহায় স্থাপনা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এত ভেতরে আর ছোট গলির মধ্যে এ প্যাভিলিয়ন বাংলাদেশকে অনুন্নত দেশ হিসেবেই জানান দিচ্ছে। এত বড় একটি এক্সপো অথচ সরকার এটিকে গুরুত্বই দেয়নি। আর গুরুত্বটা এমনভাবে দেয়া হয়েছে, যেটি দেশের জন্য নৈতিবাচক ব্র্যান্ডিংয়ে পরিণত হয়েছে। 

তারা আরও বলেন, ‘উগান্ডা, তাজাকিস্তান, পাকিস্তানের মতো দেশগুলোও অনেক বড় বড় আয়োজন করেছে। অনেক দেশের প্যাভিলিয়নের সামনে স্টেজ করে সবাই একসঙ্গে গান গাচ্ছে, উল্লাস করছে।

১২ বছর ধরে আরব-আমিরাতে থাকছেন চট্টগ্রামের আনোয়ার হোসেন। পেশায় ব্যবসায়ী। পরিবার নিয়ে এখানে বসবাস করছেন ৫ বছর হলো। ছুটির দিনে মেলায় ঘুরতে এসেছিলেন দুই মেয়ে আর এক ছেলেসহ পুরো পরিবার নিয়ে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,  ছুটির দিন তাই পরিবারকে একটু টাইম দিচ্ছি। ভেবেছিলাম মেলায় আমাদের দেশের প্যাভিলিয়নে অনেক বাঙালি ভাইবোনদের সঙ্গে দেখা হবে। কয়েকজনের সঙ্গে দেখা হয়েছেও। বেশ কয়েকটা প্যাভিলিয়ন ঘুরলাম পরিবার নিয়ে তাজিকিস্তান, উগান্ডা, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া। এ ছাড়া ইউরোপের কয়েকটি প্যাভিলিয়নে গেলাম। অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলব কয়েকটি দেশের প্যাভিলিয়ন দেখে যতটা মুগ্ধ হয়েছি, আমাদের দেশের প্যাভিলিয়ন দেখে ততটাই খারাপ লাগছে। এখানে স্বাগতম জানানোর মতোও কেউ নেই। একটা আন্তর্জাতিক মেলায় এভাবে দেশকে প্রেজেন্ট করাটা নৈতিবাচক লাগছে। আমার পরিবার ছাড়াও আমার স্ত্রীর কিছু বান্ধবী এসেছে ইরাক, আর তুর্কি থেকে। তাদের এখানে আনতেই লজ্জা পাচ্ছি। তাদের বলেছি, বাংলাদেশ অনেক উন্নত হয়েছে, আমাদের দেশ অনেক ভালো। আর এখন যদি এমন প্যাভিলিয়ন দেখায় নিজেকে ছোট লাগছে।’  

মেলার এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান বলেন, ‘কিছু জমি ট্রাকচার করা ছিল, সেখান থেকে নেয়া হয়েছে যে কারণে স্টলের ফোকাসটা চোখে পড়েনি। আর অনেক দেশ আগে থেকেই জায়গা নিয়ে নিজেরা ডেভেলপ করেছে। বাজেটও একটা বড় ব্যাপার। তবে আমরা এই বছর যেভাবে অংশগ্রহণ করেছি, সামনে আরও ভালো আয়োজন থাকবে বলে আশা করছি।’    

প্রসঙ্গত, কভিডের কারণে দেরিতে শুরু হয় এ মেলা। গত বছরের ১ অক্টোবর শুরু হয় ‘দুবাই এক্সপো-২০২০’। ছয় মাস চলার কথা রয়েছে এ মেলা।    

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০