ক্রীড়া প্রতিবেদক: বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার প্রথম টেস্টের প্রথম দিনটা ভালো যায়নি কোনো দলের জন্য। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল থেকে শুরু হওয়া এ টেস্টে বাংলাদেশের পর অস্ট্রেলিয়াও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ব্যর্থতায় খুব বড় সংগ্রহ স্কোর বোর্ডে জমা করা সম্ভব হয়নি মুশফিক বাহিনীর। তাই ম্যাচে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হলে প্রতিপক্ষকেও বেঁধে রাখতে হবে কম রানের মধ্যে। এটা ভালো করেই জানতেন টাইগার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাই প্রথম থেকেই অজি ব্যাটসম্যানদের ওপর স্পিনার দিয়েই আঘাত হানেন তিনি।
মুশফিক প্রথমেই আক্রমণে আনেন মেহেদী হাসান মিরাজকে। প্রথম থেকেই মিরাজকে খেলতে বেশ অসুবিধা পড়তে হচ্ছিল দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ম্যাট রেনশর। অজি ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় বলেই ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ।
এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে ডেভিড ওয়ার্নারকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যদিও এর আগের বলেই ওয়ার্নারকে আউট দিয়েছিলেন আলিম দার। তবে রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও লাভ হয়নি অজি সহ-অধিনায়কের।
পরের ওভারই স্মিথ বাহিনীর দ্বিতীয় উইকেটের পতন হয়। সাকিবের করা সপ্তম ওভারে রান আউট হন উসমান খাজা। খাজাকে রান আউট করেন সৌম্য সরকার। সাকিবের করা ওই ওভারের শেষ বলেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান নাথান লায়ন। সাকিবের করা বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি। দিনের খেলা শেষ হতে খুব বেশি দেরি নেই ভেবে, নাইটওয়াচম্যান হিসেবে ব্যাট করতে পাঠানো হয় এ ডানহাতি অফ স্পিনারকে। আর এত দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ তিন উইকেটে ১৮ রান। ওপেনার ম্যাট রেনশ ছয় রানে এবং অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ তিন রান করে অপরাজিত আছেন। আজ অজিদের হয়ে এ দুজন দিন শুরু করবেন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কিন্তু অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান। দলীয় মাত্র ১০ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এদের মধ্যে সৌম্য সরকার ৮ রানে এবং বাকি দুই ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস ও সাব্বির রহমান কোনো রান না করেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। ওই তিনজনই ছিলেন অজি পেসার প্যাট কামিন্সের শিকার।
দলের এমন বিপদে হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ওপেনার তামিম ইকবাল এবং সাকিব আল হাসান। চতুর্থ উইকেট ক্রিজে তামিমের সঙ্গে জুটি বাঁধেন সাকিব। চতুর্থ উইকেটে এ দুজনের যোগ করা ১৫৫ রানে প্রাথমিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে দল। তবে সাকিব বা তামিম দুজনের কেউই বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দলীয় ১৬৫ এবং ব্যক্তিগত ৭১ রানে আউট হয়ে যান তামিম। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের করা সাধারণ একটা বলে কাট করতে গিয়ে ওয়ার্নারের হাতে ধরা পড়েন টাইগার ওপেনার। তামিমের পর সাকিবও আউট হতে খুব বেশি সময় নেননি। দলীয় ১৮৮ রানে বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারকে স্মিথের ক্যাচে পরিণত করেন নাথান লায়ন। আউট হওয়ার আগে ৮৪ রান করেন সাকিব।
সাকিব-তামিমের বিদায়ে টাইগারদের বড় সংগ্রহের স্বপ্নটাও ভেঙে যায়। তাদের বিদায়ের পর দলের সংগ্রহকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারেননি কেউ। দলীয় ১৯৮ রানে ফিরে যান ব্যাংটিংয়ের অন্যতম ভরসা মুশফিকুর রহিম। তিনি করেন ১৮ রান। তাকে আউট করেন অ্যাস্টন অ্যাগার। মুশফিকের বিদায়ের পর সপ্তম উইকেট জুটিতে দলকে ভালোভাবেই এগিয়ে নিচ্ছিলেন নাসির হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
তবে আম্পায়ার আলিম দারের ভুল সিদ্ধান্তে দলের রান যখন ২৪০ রান, তখন ফিরে যান মিরাজ। মিরাজের সংগ্রহ ছিল ১৮ রান। মিরাজের পর নাসিরও ফিরে যান। প্রায় দুই বছর পর দলে ফেরা নাসির ৬১ বল থেকে ২৩ রান করেন। এরপর তাইজুল ও শফিউলকে দ্রুত আউট করেন অজি বোলাররা। আর বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২৬০ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের মধ্যে প্যাট কামিন্স, নাথান লায়ন ও অ্যাস্টন অ্যাগার তিনটি করে উইকেট লাভ করেন। বাকি উইকেটটি নেন ম্যাক্সওয়েল।
Add Comment