মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে তিন বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্বনামধন্য ব্যাংকার হিসেবে কামরুল ইসলাম চৌধুরীর দেশের তিনটি প্রধান বাণিজ্যিক ব্যাংকে সুদীর্ঘ বহুমুখী কর্ম অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ থেকে সম্মানসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর তিনি ১৯৮৩ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন। পরে তিনি এনসিসি ব্যাংকে যোগদান করেন এবং সফলতার সঙ্গে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তিনি ২০০১ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকে যোগ দেন এবং ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক, আঞ্চলিক প্রধানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজের মাধ্যমে ব্যাংকের উন্নয়নে সর্বোচ্চ পেশাগত কর্মদক্ষতার পরিচয় দেন। কর্মজীবনে তিনি দেশে ও বিদেশে অনেক প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও ওয়ার্কশপে অংশ নেন। ব্যাংকিং বিষয়ে পেশাদারি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত, হংকং, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুর ভ্রমণ করেন। সম্প্রতি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নিয়ে শেয়ার বিজের প্রতিবেদক জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
শেয়ার বিজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার মতামত কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: ব্যাংকিং ব্যবস্থার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০ সালে বিশ্বের প্রথম ব্যাংকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আমরা অনেকেই হয়তো জানি যে ব্যাংকটি চীন দেশে প্রতিষ্ঠিত ‘শান্সি ব্যাংক’। যদিও বিশ্বের সর্বপ্রথম সংগঠিত ব্যাংক হিসেবে ধরা হয়, ১১৫৭ সালে ভেনিস সরকারের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক-‘ব্যাংক অব ভেনিস’কে। সুতরাং আমরা বলতে পারি আমাদের এই আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রায় হাজার বছর হতে চলল।
অন্যদিকে, মোবাইল ব্যাংকিং আমাদের দেশে মাত্র ১০ বছর অতিবাহিত করেছে। সে হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা আমাদের দেশে এখনও সদ্য নিষিক্ত ভ্রণ পর্যায়ে আছে। এখন এই ভ্রণের ভবিষ্যৎনির্ভর করবে সঠিক পরিচর্যার ওপর। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমি প্রচণ্ড মাত্রায় আশাবাদী। ব্যক্তিগত মতামত থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভবিষ্যৎ সমুজ্জ্বল। দেশের আর্থিক খাতে দ্রুত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ২৪/৭ সার্ভিসের মাধ্যমে মানুষের অর্থ লেনদেনের প্রধান সহযোগী হিসেবে সর্বোপরি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। নতুন সার্ভিস ইনোভেশন সেই সঙ্গে কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ইন্টেগ্রেশনের দরুন মানুষের আর্থিক পরিষেবা বহুগুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই মানুষ ছুটির দিনে ঘরে বসেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনার ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবাকে সর্বোচ্চ গুরত্ব প্রদান করে আসছে।
আমার কাছে মনে হয়, মোবাইল ব্যাংকিং মোবাইল ফোনের মতো আস্তে আস্তে মানুষের জীবনযাত্রার অংশ হয়ে উঠবে। ঠিক যেমন করে আশির দশকে সম্পূর্ণ অপরিচিত এবং নব্বইয়ের দশকে সামান্য পরিচিত একটা ডিভাইস বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে স্মার্টফোন নামে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে ঠিক তেমনি করে মোবাইল ব্যাংকিংও একটা সময় মানুষের অর্থ ব্যবস্থাপনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠবে।
শেয়ার বিজ: এখন বাংলাদেশে ৬১টি ব্যাংক। তারপরও মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হওয়ার কারণ কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: দেখুন, আপনার যদি অর্ধশত জাহাজ থাকে তবুও আপনার ডিঙ্গি নৌকার দরকার হবে। জাহাজ যেখানে পৌঁছাবে না সেখানে ডিঙ্গি নৌকা যাবে। প্রয়োজন শুধু জাহাজ এবং ডিঙ্গি নৌকাগুলোকে একই দিকনির্দেশনায় কাজ করা। ফাইনান্সিয়াল ইনক্লুশনের (আর্থিক অন্তর্ভুক্তির) ব্যাপারটা তেমনি।
ব্যাংকিং পরিষেবায় মূলত গ্রাহকদের একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লেনদেন সীমাবদ্ধ থাকে। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমে (ছোট লেনদেনের ক্ষেত্রে) মানুষ বর্তমান সময়ে খুব সহজে, ঘরে বসে, এক স্থান থেকে অপর স্থানে দ্রুত লেনদেন সম্পন্ন করে ফেলছে। এসএমএসের মাধ্যমে গ্রাহক দ্রুত অর্থ প্রাপ্তি নিশ্চিত করছে। ৬১টি ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সময়সীমার বাইরে এবং বন্ধের দিনগুলোতে মানুষের প্রতিকূলতার পরিপূরক হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা দিন দিন সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ই-কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রেও এমএফএস একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।যেহেতু, প্রয়োজন এবং ব্যবহারিক উপযোগিতা সম্পূর্ণ ভিন্ন সেহেতু ব্যাংকের সংখ্যার ওপর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা একদমই নির্ভর করে না।
শেয়ার বিজ: এমএফএস কি ব্যাংকের বিকল্প হতে পারে?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: দেখুন, এমএফএস, কখনও ব্যাংকের বিকল্প হতে পারে, আমার কাছে মনে হয়- এই চিন্তাটাই ঠিক না। মোবাইল ব্যাংকিং, ব্যাংকিং ব্যবস্থার একটা মাধ্যম মাত্র। একটা মাধ্যম কখনও একটা সিস্টেমের সম্পূর্ণ বিকল্প হতে পারে না। ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সম্পর্কটা সম্পূরক কিন্তু পরিপূরক নয়।
শেয়ার বিজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে মাত্র দুই থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের আধিপত্য। এই সেবাগুলোতে ব্যাংকগুলোর অবস্থান নিয়ে আপনার মতামত কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: এটা গোটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বৃহত্তর বাজেটের প্রয়োজন হয়, প্রয়োজন হয় প্রচুর এ টি এল ও বিটিএল কার্যক্রমের। ব্যানার, ফেস্টুন ডিজাইন করা থেকে শুরু করে মার্কেটের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার ম্যানেজমেন্ট, কমিশন প্রদানপূর্বক ফুল সাইকেল বিজনেস মেইনটেইন এবং তার নিরীক্ষণ করার জন্য যে বাজেটের প্রয়োজন পড়ে তা করে অনেক ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানই বিনিয়োগে অনিচ্ছুক থাকে এবং কার্যত মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবা চালু করার পরেও খুব সীমিত পরিসরে অপারেশন পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে মার্কেট লিডিং মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অনেকক্ষেত্রেই তাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ প্রাপ্তির সুবাদে নিজস্ব ঘাটতি পূরণ করতে সচেষ্ট হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক বা আন্তঃদেশীয় তৃতীয় পক্ষের বিনিয়োগের ব্যতিরেকে ঝুঁকি নিরীক্ষণপূর্বক এ ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ততটা আত্মবিশ্বাসী নয়। আমার কাছে মনে হয় ব্যাংকগুলোকে সামষ্টিকভাবে এ ব্যাপারে আরও যত্নবান হতে হবে।
শেয়ার বিজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের ঝুঁকি কতটুকু?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: মোবাইল ব্যাংকিং সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত। আমি জানি, আপনি এই প্রশ্নটা দিয়ে আমাকে, বিভিন্ন সময় এই ইন্ডাস্ট্রিতে ঘটে যাওয়া ফ্রোডুলেন্ট অ্যাক্টিভিটিজগুলোর কথা বলছেন। তবে আমি আপনাকে এ ব্যাপারে যা বলব, তা শুনে আপনি সত্যিই অবাক হবেন। আজ পর্যন্ত মার্কেটে যতগুলো ফ্রোডুলেন্ট অ্যাক্টিভিটির তদন্ত হয়েছে, তার রিপোর্ট থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে- তার সবগুলোই হয়েছে-কাস্টমারদের অজ্ঞতাবশত গোপন নাম্বার শেয়ার অথবা লোভের বশবর্তী হয়ে গোপন নাম্বার শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে। অজ্ঞতাবশত গোপন নাম্বার শেয়ার করার ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট পরিমাণে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি কিন্তু লোভের বশবর্তী হয়ে যে ফ্রোডুলেন্ট অ্যাক্টিভিটি হচ্ছে তা প্রতিকার করা কঠিন।
পাশাপাশি, মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলো তাদের মোবাইল অ্যাপে জটিল পিন নির্ধারণ ও ‘টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন’ চালু করার দরুন ঝুঁকি প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে উপর্যুপরি বিজ্ঞাপন প্রচারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করার প্রক্রিয়া প্রদর্শিত হয়। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর গ্রাহককে পিন রিসেট করতে বাধ্য করার উপযুক্ত প্রক্রিয়া গ্রহণের মাধ্যমে গ্রাহকের ওয়ালেটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ই-কেওয়াইসি নিবন্ধনের মাধ্যমে সঠিক গ্রাহক যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। এর দরুন জালিয়াতি প্রতিরোধ প্রক্রিয়া অনেকাংশেই সফল হয়েছে। এখন, আপনি যদি স্বেচ্ছায় আপনার লকারের চাবি একজন অসৎ ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রাখেন তো আপনার নিরাপত্তা প্রহরীর পক্ষে চৌর্যবৃত্তি ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।
শেয়ার বিজ: এমএফএস, প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তঃলেনদেনের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: আমি এ ব্যাপারে খুবই ইতিবাচক। ইন্টার অপারেবিলিটি (আন্তঃলেনদেন) চালু হলে খুব সহজে এমএফএস এবং ব্যাংকগুলোর গ্রাহকরা নিজেদের অ্যাকাউন্টের মধ্যে অর্থ লেনদেনের সুযোগ পাবে। কোনো লোকালয়ে একটি নির্দিষ্ট এমএফএস কোম্পানির এজেন্ট উপস্থিত না থাকলেও অত্র এলাকায় উপস্থিত অপর যেকোনো এমএফএস কোম্পানির এজেন্টের মাধ্যমে সেই কোম্পানির গ্রাহক ক্যাশ উত্তোলন সেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া যেকোনো ব্যাংক থেকে গ্রাহক তার হিসেবের বিপরীতে প্রয়োজন মোতাবেক এমএফএস অ্যাকাউন্টে অর্থ আনায়ন এবং প্রদান করতে পারবে। আমি মনে করি, এতে করে গ্রাহকদের আর্থিক লেনদেনে এজেন্ট নির্ভরতা কমবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
শেয়ার বিজ: এমএফএস ব্যবসায় অনেক ব্যাংক লোকসান গুনছে শোনা যায়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: আমার কাছে মনে হয়, আমাদের এ ব্যাপারে সামষ্টিকভাবে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। একে লোকসান বা আর্থিক ক্ষতি হিসেবে না দেখে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত। কারণ এই ব্যবসায় লাভ-লোকসান হিসাব করার সময় এখনও আসেনি।
শেয়ার বিজ: মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সার্ভিস চার্জ নাকি অনেক বেশি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: এটা একদমই ভুল পারসেপশন। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সার্ভিস চার্জ একদমই নেই যদি গ্রাহক অ্যাপ ব্যবহার করেন। কারণ অ্যাপের মাধ্যমে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো সম্পূর্ণ ফ্রি। তবে যে চার্জটা নিয়ে কাস্টমারদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কমপ্লেইন থাকে সেটা হচ্ছে ক্যাশ আউট চার্জ যা আমাদের মাইক্যাশে হাজারে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা টাকা।
আপনি যদি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মূল উদ্দেশ্যের দিকে খেয়াল করেন তবে দেখবেন-মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ভিশন হচ্ছে মানুষের মানিব্যাগ রিপ্লেস করে দেয়া। অর্থাৎ মানুষের দৈনন্দিন খুচরা খরচটুকু যাতে এই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নির্বাহ করা যায়। তবে, এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা যে মোবাইল ব্যাংকিংকে আমরা শুধু টাকা পাঠানোর মাধ্যমে পরিণত করে ফেলেছি যাতে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে টাকা পাঠানো হয় এবং কাস্টমার টাকাটা সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ আউট করে তার দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করে, তাই সার্ভিস চার্জ বেশি মনে হচ্ছে। কিন্তু যদি কাস্টমার টাকাটা ক্যাশ আউট না করে দৈনন্দিন খরচগুলো পেমেন্টের মাধ্যমে নির্বাহ করতে পারত তবে মোবাইল ব্যাংকিং সম্পূর্ণ চার্জমুক্ত থাকত।
আবার ১.৮৫ শতাংশ চার্জের ব্যাপারে আসা যাক। কাস্টমার অ্যাকাউন্টে যখন ১০০ টাকা ক্যাশ ইন করা হয় তখন কোম্পানির ৮০ পয়সার বেশি খরচ হয় চ্যানেল কমিশন হিসেবে কিন্তু এই খরচ থেকে কাস্টমারদের কোনো প্রকার চার্জ করা হয় না। কারণ আমাদের অ্যাকাউন্টগুলো ক্যাশ ইন ফ্রি। আবার এই টাকাটাই যদি ক্যাশ আউট হয় তখন কোম্পানির আবার ৮০ পয়সার বেশি চ্যানেল কমিশন হিসেবে খরচ হয়। তখন কেবল কাস্টমারদের থেকে ১ টাকা ৮৫ পয়সা চার্জ করা হয়। সুতরাং, প্রতি ১০০ টাকা ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটে কোম্পানির চ্যানেল কমিশন হিসেবে খরচ হয় ১ টাকা ৬০ পয়সারও বেশি আর ক্যাশ ইনকৃত ১০০ টাকা যদি ক্যাশ আউট হয় তবেই কেমল কোম্পানির মার্জিন থাকে ২৫ পয়সার কাছাকাছি থাকে। আশা করি, এখন আপনার কাছে মনে হচ্ছে না যে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে খরচ অনেক বেশি।
শেয়ার বিজ: ক্রিপ্টোকারেন্সি এমএফএস ব্যবসায় কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: আমি ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপারে তেমন কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না। কারণ এখনও ক্রিপ্টোকারেন্সিন দেশে কোনো লিগেল ফর্মে এক্সিস্ট করছে না, আপনি জানেন সেটা। ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সি যদি কোনো লিগ্যাল ফর্মে আসে তখন সে ব্যাপারে আলোচনা করা যাবে।
শেয়ার বিজ: অর্থ পাচারের অভিযোগ শোনা যায়। এর কারণ কী?
কামরুল ইসলাম চৌধুরী: বর্তমান সময়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কারণে আমাদের দেশে অর্থ পাচার অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পিএসডি ডিপার্টমেন্ট এমএফএস চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ পাচার রোধে সর্বদা সচেষ্ট ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোও বাংলাদেশ ব্যাংককে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছে। যেকোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ওই লেনদেন সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে, তাছাড়া
ই-কেওয়াইসি ব্যবস্থার কারণে সব গ্রাহকের তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে এমএফএস ব্যবস্থার মাধ্যমে অর্থ পাচারের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তারপরেও কোনো ধরনের সন্দেহজনক লেনদেন পরিলক্ষিত হলে দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে বলে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যবহ্ত হওয়ার সুযোগ নেই।