Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:46 pm

বাংলাদেশের বিদ্যুতের দাম ১৫ টাকা রাখবে আদানি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা বিতর্কের মাঝেই বৃহস্পতিবার ভারতের ঝাড়খণ্ড থেকে আদানির বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়েছে। যদিও বিদ্যুতের দাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। কয়লার দাম নিয়ে আদানির প্রস্তাব ও তাতে বাংলাদেশে আপত্তির কারণে বিষয়টি ঝুলে ছিল। কয়লার উচ্চ দামের কারণে মাসে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা গচ্চা যাওয়ার শঙ্কা করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ কারণে কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি তোলা হয়।

যদিও কয়লার উচ্চ দাম নির্ধারণ থেকে অবশেষে সরে আসতে সম্মত হয়েছে আদানি পাওয়ার। এক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ার কয়লা ব্যবহারের বিষয়ে রাজি হয়েছে কোম্পানিটি। পাশাপাশি কয়লার দামও বাজারমূল্যে নির্ধারণে সম্মত হয়েছে আদানি। এতে বাংলাদেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের দাম পড়বে প্রতি ইউনিট ১৫ টাকার কম।

যদিও গত ডিসেম্বরে আদানির বিদ্যুতের দাম ২৪ টাকার বেশি পড়বে বলে প্রাক্কলন করেছিল পিডিবি। আদানির প্রস্তাবিত কয়লার দামের ওপর ভিত্তি করে ওই প্রাক্কলন করা হয়। সে সময় নিউক্যাসেল কোল ইনডেক্স অনুযায়ী প্রতি টন কয়লার দাম ধরা হয়েছিল ৪০৪ ডলার।

পিডিবির প্রাক্কলনে দেখানো হয়, ঝাড়খণ্ডে নির্মিত কয়লাচালিত আদানির কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পূর্ণ সক্ষমতায় উৎপাদন করা হলে মাসে প্রায় ৯২ কোটি ৮২ লাখ ৬৮ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এতে কেন্দ্রটিতে জ্বালানি ব্যয় পড়বে ইউনিটপ্রতি ১৮ দশমিক ৩৪ সেন্ট। আর ক্যাপাসিটি চার্জ চার দশমিক ২৪ সেন্ট এবং অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স চার্জ পড়বে শূন্য দশমিক ১৩ সেন্ট। অর্থাৎ গড় উৎপাদন ব্যয় পড়বে ২২ দশমিক ৭১ সেন্ট বা ২৪ টাকা ২৯ পয়সা (এক ডলার = ১০৬.৯৫ টাকা)।

এ-সংক্রান্ত প্রাক্কলনে দেখানো হয়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য আমদানিকৃত কয়লার দাম ধরা হয়েছে প্রতি টন (৪৬০০ কিলোক্যালরি) ২৪৫ ডলার। তবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য যে মানের কয়লা কেনা হচ্ছে, তাতে প্রতি  টনে ৪৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। চুক্তিমতে, প্রতি টন কয়লার দাম ১১০ ডলারের বেশি হলে বাড়তি দামের ৫৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হয় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে। এতে পায়রার কয়লার দাম পড়ে প্রতি টন ১৮৪ ডলারের মতো।

যদিও আদানির সঙ্গে ২০১৭ সালে সম্পাদিত চুক্তিতে ডিসকাউন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনা করা হয়নি। এতে চুক্তির ভুলে আদানির কয়লার জন্য পুরো দামই পরিশোধ করতে হবে। এতে চার হাজার ৬০০ কিলোক্যালরি তাপন ক্ষমতার কয়লায় মাসে গচ্চা যাবে প্রায় ৬৪ মিলিয়ন ডলার বা ৬৮৪ কোটি টাকা। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদানির কয়লার দাম নিয়ে আপত্তি তোলে পিডিবি।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কয়লার দাম নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশে আসে আদানির প্রতিনিধিদল। বৈঠকে পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দামেই আদানির কয়লার দাম নির্ধারণের কথা জানানো হয়। তবে আদানির বিদ্যুতের দাম কত হবে বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি বৈঠকে।

এসব বিষয়ে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ইমেইলের মাধ্যমে জবাব দিয়েছে কোম্পানিটি। আদানি পাওয়ার দাবি করেছে, আদানিকে পিডিবি চুক্তি সংশোধনের জন্য কখনও অনুরোধ করেনি। আদানি আরও দাবি করছে, গণমাধ্যমে আদানির বিদ্যুৎ ও কয়লার দাম নিয়ে একটি মহল ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আদানি মনে করে, এ চুক্তি স্বচ্ছ এবং তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশের জন্য লাভজনক। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আদানি জানিয়েছে, ঝাড়খণ্ডের গড্ডা থেকে বাংলাদেশ পায়রা, রামপাল বা এস আলমের চেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দামে বিদ্যুৎ পাবে। যে দামে এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, আদানির বিদ্যুতের দাম তার সমান বা কম হবে। বাংলাদেশে যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করছে আদানি, সেই দাম সম্পর্কেও একটি ধারণা দেয়া হয়েছে ইমেইলে। তাদের হিসেবে, বর্তমান বাজারদর ও কয়লার মান অনুযায়ী প্রতি টন কয়লার মূল্য হবে ১৩৯ ডলার।

এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জ্বালানি খরচ হবে ৯ দশমিক ৩৯ ইউএস সেন্ট। এর সঙ্গে ক্যাপাসিটি চার্জ ৪ দশমিক ২৪ সেন্ট যোগ হবে। এই হিসাবে মার্চে কয়লা আমদানি করলে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৩ দশমিক ৭৬ সেন্ট বা ১৫ টাকার কম।

কয়লার দাম নির্ধারণের ব্যাপারে আদানির ইমেইলে বলা হয়েছে, কয়লার প্রকৃত কিলোক্যালোরি বা মান অনুযায়ী দাম নেবে আদানি। বৈশ্বিক কয়লা মূল্যের সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবহƒত কয়লার মান অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ বছর মার্চে ৬৩৩২ কিলোক্যালরি ইন্দোনেশিয়ার কয়লার (এইচবিএ) বেঞ্চমার্ক বা ভিত্তিমূল্য ১৯৭ ডলার। আদানির বয়লারের জন্য ৪৬০০ কিলোক্যালোরি ভ্যালুর কয়লা প্রয়োজন। তাই মার্চে আদানির বিদ্যুতের জন্য আমদানি করা কয়লার দাম পড়বে প্রতি টন ১৪৩ ডলার। ৪০৪ ডলার কয়লার দাম চাওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছে আদানি।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নভেম্বরে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে পিডিবি সঙ্গে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের চুক্তি সই হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ৩৮ মিনিটে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসা শুরু হয়। চলতি অর্থবছর কেন্দ্রটি থেকে সর্বোচ্চ ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।