বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমছে!

CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), default quality?

ইসমাইল আলী: কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ দ্রুত বাড়ছে। যদিও এ সময় বেসরকারি ঋণ কিছুটা কম হারে বেড়েছে। তবে সরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি হারে। ফলে ২০২৩ সাল শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ প্রথমবারের মতো ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। অথচ বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েক বছর ধরে হ্রাস পাচ্ছে। এতে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সক্ষমতা ক্রমেই কমছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, মোট বৈদেশিক ঋণের অনুপাতে রিজার্ভ অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের অনুপাতে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে তা নেমে গেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত কমেছে প্রায় সাড়ে ৩৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ স্থিতি ছিল ৫৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তা আরও বেড়ে হয় ৭৩ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালে ৯১ দশমিক ০১ বিলিয়ন ও ২০২২ সালে ৯৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এই পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদেশি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার।

২০১৮ সাল শেষে মোট (গ্রস) রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সাল শেষে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৩২ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ বেশ খানিকটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। পরের দুই বছর দ্রুতই কমেছে রিজার্ভ। এর মধ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বিপিএম-৬ অনুযায়ী) ২১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।

এর ভিত্তিতেই প্রতিবেদনে গত ছয় বছরের বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সাল শেষে রিজার্ভ ও বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ছিল ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময় বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে বৈদেশিক ঋণের ৫৬ শতাংশের বেশি পরিশোধ করা যেত। পরের বছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২০ সালে বৈদেশিক ঋণ দ্রুত বাড়লেও রিজার্ভ তার চেয়েও অধিক হারে বেড়েছে। এতে ওই বছর ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত দাঁড়ায় ৫৯ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময় বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে বিদেশি ঋণের ৫৯ শতাংশ পরিশোধ করা যেত।

পরের তিন বছর ধরে এ অনুপাত কমছে। ২০২১ সালে রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও বৈদেশিক ঋণ তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে। এতে ওই বছর ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত কমে দাঁড়ায় ৫০ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে রিজার্ভ আরও কমায় এ অনুপাত কমে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। আর গত বছর শেষে রিজার্ভ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। এতে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ দিয়ে বৈদেশিক ঋণের মাত্র ২১ দশমিক ৭ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৩৫ দশমিক ১৪ বিলিয়ন ডলার ও বেসরকারি খাতের বেড়েছে ৮ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সাল শেষে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮ সাল শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন, যা ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।

গত পাঁচ বছরে বিদেশি ঋণ সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে বাড়ে ৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে ৯ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন, ২০২১ সালে রেকর্ড ১৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন, ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ও ২০২৩ সালে ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। পরিমাণের পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতেও বিদেশি ঋণ কয়েক বছর ধরে দ্রুত বাড়ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল শেষে জিডিপির অনুপাতে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ ছিল বিদেশি ঋণ। ২০১৯ সালে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২০ সালে তা বেশকিছুটা বেড়ে হয় ১৯ দশমিক ১ শতাংশ, ২০২১ সাল শেষে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০২২ সাল শেষে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২০২৩ সাল শেষে ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

এদিকে বৈদেশিক ঋণ বাড়তে থাকায় মাথাপিছু ঋণও দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ছিল ৩৪৬ দশমিক ৭২ ডলার, যা গত ডিসেম্বর শেষে দাঁড়িয়েছে ৫৮৯ দশমিক ২৬ ডলার। অর্থাৎ পাঁচ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এছাড়া ২০১৯ সাল শেষে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ দাঁড়ায় ৩৭৮ দশমিক ৩৮ ডলার, ২০২০ সাল শেষে ৪৩৫ দশমিক ৭৮ ডলার, ২০২১ সাল শেষে ৫৩৭ দশমিক ৫৩ ডলার ও ২০২২ সাল শেষে ৫৬৩ দশমিক ৩৪ ডলার। অর্থাৎ ২০২১ সালে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি (১০১ দশমিক ৭৫ ডলার) বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০