বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায় নরওয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সামুদ্রিক খাতে সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও এগিয়ে নিতে চায় নরওয়ে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে এমন মনোভাব প্রকাশ করেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানেকিন হুইটফেল্ড।
বৈঠকের বিষয়ে ঢাকাস্থ নরওয়ে দূতাবাস জানায়, নবনিযুক্ত নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চলতি বছর দুই দেশের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে দুই দিনের বাংলাদেশ সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দেশটির পক্ষ থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুষ্ঠু নির্বাচন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আলোচনা হয়।
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলোচনায় অফশোর নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নিরাপত্তা ও সবুজ উৎপাদন সুবিধা তৈরিতে গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। এ সময় নরওয়ের মন্ত্রী জাহাজ ভাঙা শিল্পের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং হংকং কনভেনশন অনুসমর্থনের বিষয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনার বিষয়ে খোঁজ নেন।
এর আগে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে গতকাল এক পৃথক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে ‘টেকসই ও সবুজ ফ্রেমওয়ার্ক এনগেজমেন্ট’-এর ওপর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাজধানীর একটি হোটেলে এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ডেনমার্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা-বিষয়ক মন্ত্রী মোলার মর্টেনসেন এই সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। ডেনমার্কের সফররত যুবরানী ম্যারি এলিজাবেথ ডোনাল্ডসন এই চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে ড. মোমেন বলেন, এই ফ্রেমওয়ার্ক এনগেজমেন্ট বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের মধ্যে একটি সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কাজ করবে। এরপর এটি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে নিয়ে একটি অ্যাকশন প্লানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও বহুমুখী করার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ আমাদের দু’দেশের অভিন্ন স্বার্থ সংরক্ষণের ইঙ্গিত বহন করে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমঝোতা স্মারকটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের নিজস্ব অভিযোজন কৌশল, ড্যানিশ উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞদের অভিজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময়ে পরস্পরের মধ্যে একটি ঐক্য গড়ে তুলবে।
ডেনমার্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা-বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু এজেন্ডা বাস্তবায়নে ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় এবং এ ব্যাপারে পরস্পরের মধ্যে সক্রিয় যোগাযোগ রয়েছে। আজকের এই গ্রিন ফ্রেমওয়ার্ক ডকুমেন্টে স্বাক্ষরের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হলো যে, আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘প্যারিস চুক্তিতে’ যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়নে প্রস্তুত।
ডেনমার্কের রাজকুমারি ম্যারী কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ও সুন্দরবন এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা এলাকা পরিদর্শনের জন্য তিন দিনের সফরে গতকাল বাংলাদেশে এসেছেন। গতকাল তিনি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।