বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বজ্রপাত হয় মে মাসে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশের বজ্রপাত ঋতুভিত্তিক। মধ্যরাত থেকে সকালে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি এবং মে মাসে সর্বোচ্চ বজ্রপাত হয়। অন্যদিকে বজ্রপাতের হট ও কোল্ড স্পটগুলো দিন ও রাত অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। জলাভূমি ও স্থায়ী জলাশয়গুলোয় দিন ও রাতে বজ্রপাতের সংখ্যা অন্যান্য ভূমির আচ্ছাদনের তুলনায় বেশি এবং সুপ্ততাপ প্রবাহ দেশের বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে।

‘বজ্রপাতের স্থানিক ও কালিক বিন্যাস, কারণ ও বাঁচার উপায়’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) গতকাল অনলাইনে এ সেমিনারের আয়োজন করে। সূত্র: বাসস

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক এম এ ওয়াহেদের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

সেমিনারে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় বজ্রপাত অপেক্ষাকৃত নতুন দুর্যোগ। বাংলাদেশে বজ্রপাত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে, ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে ঘোষণা করে। বজ্রপাত থেকে প্রাণহানি ও ঝুঁকি হ্রাসে নিরাপত্তা পাঠের বিকল্প কম।

বাংলাদেশে বজ্রপাতে প্রাণহাণির ঘটনা বেড়ে চলেছে। বজ্রপাতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন আসে মৃত্যুর খবর। বেশিরভাগ সময় বিচ্ছিন্নভাবে এক দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আবার কখনও কখনও একমাত্র বজ্রপাতে বহু মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে থাকে।

বজ্রপাতে শুধু গ্রামের মানুষ মারা যাচ্ছে এমনটি নয়। ৫ জুন রাজধানীর মালিবাগে বজ্রপাতের সময় দুই শিশুসহ তিনজন নিহত হয়েছেন। বজ্রপাতে ২০১১ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ১১ বছরে মোট দুই হাজার ৮০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ৩২৯ জন মারা গেছেন। এ বছর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময় আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জামালপুর, নেত্রকোনা ও চট্টগ্রামে বজ্রাঘাতে প্রাণহানি বেড়েছে। তবে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ।

সেমিনারে জানানো হয়, ২০২১ সালের ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জে বরযাত্রা অনুষ্ঠানে ১৬ থেকে ১৭ জনের এবং ২৩ আগস্ট দিনাজপুরে চার বালকের একসঙ্গে মারা যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায় ভূমির বিদ্যুতায়ন এবং পার্শ্ব ঝলকানির দরুন তাদের মৃত্যু হয়।

আমাদের দেশে বজ্রপাতের ঘটনা মৌসুমভিত্তিক, তাই বার্ষিক উপাত্তের ভিত্তিতে ঝুঁকি হ্রাসের পদক্ষেপ নিলে প্রাণহানির হ্রাসে কার্যকর কিছু হওয়ার সম্ভাবনা কম। অত্যধিক জনঘনত্ব ও বজ্রপাত মৌসুমে মাঠে-ঘাটে এবং জলাশয়ে বেশি মানুষ কাজে সম্পৃক্ত থাকে বলে সাম্প্রতিককালে মৃত্যু বাড়ছে।

আবু নাসের খান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণালব্ধ ফলের ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করলে বজ্রপাতে মৃত্যুসহ ক্ষয়ক্ষতি কমাতে সুফল সবচেয়ে বেশি পাওয়া যাবে। আজকের এ গবেষণা প্রবন্ধটি পরবর্তী গবেষণার অন্যতম ভিত্তি হতে পারে।

বক্তারা বলেন, বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। বজ্রপাত থেকে জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিতে জনসচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় সম্পর্কে জানাতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মূল গণমাধ্যমকে ও সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা কার্যক্রম নিতে হবে।

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. সুলতানা শফী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ও জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, নেত্রকোনার বৃক্ষপ্রেমিক হামিদ কবিরাজ প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০