বাংলাদেশে আমিরাতের বড় মাপের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কে বিশেষ করে তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য এবং আইসিটি ও আইটিইএস (আইটি সংশ্লিষ্ট সার্ভিসেস) খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক বাজার এখন উন্নত বেসরকারি ইকুইটি ও ফিন-টেক সমাধান দিতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রায় বার বছর আগে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, এখন তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। আমি, এজন্য, আপনাদের আমাদের অংশীদার হওয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’ খবর: বাসস।

প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার অবস্থানস্থলের ভার্চুয়াল মিটিং রুম থেকে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আয়োজিত এক যৌথ ব্যবসা পরিষদে (জেবিসি) বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ লাভের দেশ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ নগরায়ণ, শিল্পায়ন এবং ব্যক্তির সঙ্গে শাসন, উদ্ভাবন ও বাজার ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান টেলি-যোগাযোগে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ব-বাজারের সঙ্গে আমাদের উৎপাদন উপকরণগুলোকে যুক্ত করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৮০ লাখ মানুষের বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো আছেই। আমাদের জনগণ যুবক, উদ্যোমী ও উচ্চাভিলাষী।’ শেখ হাসিনা বলেন, কৃষিতে তার সরকারের ব্যাপক ও নানা ধরনের উদ্ভাবন, কৃষি সম্প্রসারণ, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশের শ্রমাশ্রয়ী আয় অনেক দেশের তুলনায় দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। পরে দুদেশের মধ্যে জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার জন্য এফবিসিসিআই এবং ইউএই চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন এবং আবুধাবি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই নিজ নিজ পক্ষে স্মারকে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ইউএইর বৈদেশিক বাণিজ্যমন্ত্রী ড. থানি বিন আহমেদ আল জিওদি, এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট জসিম উদ্দিন, আবুধাবী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ মোহামেদ আল মাজরাউই বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি চমৎকার ভূ-কৌশলগত অবস্থান এবং সব প্রধান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক জাহাজ রুটের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জনবহুল ও ক্রমবর্ধমান দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও পূর্ব-এশিয়া অঞ্চলের মিলনস্থলে রয়েছি। আমাদের একটি বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার তো রয়েছেই; পাশাপাশি আমাদের নিকটবর্তী অনেক দৃশ্যত সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে।’

তিনি বলেন, এসব সুবিধা বাংলাদেশকে বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে এবং আমাদের দেশ এ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ পণ্য উৎপাদন ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে।

আমাদের নীতি হচ্ছে, ‘সবার সঙ্গে মিত্রতা, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এই নীতিই আমাদের মুক্ত-বাজার বাণিজ্য ও একটি স্বাধীন অর্থনীতির সব প্রতিবন্ধকতা থেকে আমাদের পৃথক করে রেখেছে। আজকের বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। আমরা চামড়া, পরিবেশবান্ধব পাট ও পাটজাত দ্রব্য, খাদ্য ও সবার ওপর আইসিটি ও আইটিইএসে (আইটি এনাবলড সার্ভিসেস) ভালো ও দক্ষ।’

ফ্রিল্যান্সিং প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এছাড়া বাংলাদেশ উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের জন্য পূর্ণ স্পেকট্রাম পাচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে একটি বিষয় না বললেই নয়, বাংলাদেশের জনশক্তি আমাদের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেÑএরা কঠোর পরিশ্রমী, সাশ্রয়ী শ্রমিক এবং এরা দ্রুত কাজ শিখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও আমাদের হাই-টেক পার্কগুলো এখন প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশকে তাদের নিজ দেশ হিসেবে বেছে নিতে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো দেশ হিসেবে তুলে ধরতে নীতিগত ও অবকাঠামো উভয় ক্ষেত্রেই তাদের সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা বহুমুখী সেতু, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রো রেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প এবং এ ধরনের মেগা প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে অবকাঠামোগত বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পগুলো তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থানের সঙ্গে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ করিডোরের অর্থনৈতিক স্থানগুলোকে সংযোগ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন খাদ্য, আর্থিক ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়েকটি স্তরে আমাদের যোগাযোগ বাড়াচ্ছি।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিদ্যমান থাকায় বিনিয়োগকারীরা খুব স্বাচ্ছন্দ্যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন। তাছাড়া বাংলাদেশে ব্যবসায় বিদেশি মালিকানার জন্য কোনো ধরনের সীমাবদ্ধতাও নেই। অধিকন্তু বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার শক্তিশালী সঞ্চয় রয়েছে। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তাদের দেশে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের বাধা নেই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি গর্বের সঙ্গে জানাচ্ছেন যে, তার সরকার নারী ক্ষমতায়ন সুসংহত করেছে এবং নারীরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমানতালে বিচরণ করছে। আমাদের দেশে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অংশীদার। মূলধারায় নারী-পুরুষের সমান পদচারণা সব ক্ষেত্রে আমাদের শক্তিকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০