শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুন্দর পরিবেশ উল্লেখ করে আরও বেশি বেশি বিনিয়োগ করতে তুরস্কের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন’-এর সভায় যোগ দিতে তুরস্কে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী। গত ১৯-২০ নভেম্বর আঙ্কারায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এবারের যৌথসভায় বাণিজ্য ও বিনিয়োগসহ ১৫টি লক্ষ্য নিয়ে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন’ সভা। যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনে তুরস্কের সঙ্গে এটি পঞ্চম সভা।
অর্থনৈতিক সভায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য-বিনিয়োগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, আইসিটি, শিপ বিল্ডিং, শিল্প, কর্মসংস্থান, নৌপরিবহন, কৃষি, শিক্ষা, নগরায়ণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পর্যটন ও বিমান পরিবহন, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, সংস্কৃতি-ট্যুরিজম, ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স, মানবসম্পদ উন্নয়ন, পাট-টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যায় তুরস্কের গ্র্যান্ড ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, তুরস্ক একটি অন্যতম অসাম্প্রদায়িক দেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের নীতিতে সামঞ্জস্য রয়েছে। কেননা, বাংলাদেশ এরই মধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে বিসর্জন এবং ত্যাগ স্বীকারসহ অনেক ক্ষেত্রে অসাধারণ সামঞ্জস্য রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান দেশটিকে আঞ্চলিক যোগাযোগ, বিদেশি বিনিয়োগ ও গ্লোবাল আউটসোর্সিংয়ের একটি কেন্দ্রে পরিণত করেছে। দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকে টেকসই করার জন্যই সরকার এ শিল্পাঞ্চলগুলো গড়ে তুলেছে।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং আকর্ষণীয় প্রণোদনার সুযোগ গ্রহণের মাধ্যমে অধিক হারে মুনাফার সুযোগ রয়েছে। ইলেকট্রনিকস, ওষুধ, গ্যাসসহ বেশ কিছু খাতে তুরস্ক বিনিয়োগে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ায় মন্ত্রী সাধুবাদ জানান এবং আরও বেশি বেশি বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
তিনি তুরস্ককে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান করে বলেন, তুরস্ক বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। তারা যদি বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার জন্য জায়গা নিতে চায়, তাহলে সরকার তাদের সর্বতোভাবে সহায়তা করবে।
স্পিকার মুস্তফা সেন্তোপ বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দূরত্ব অনেক হলেও দুদেশের মধ্যে ধর্ম, সংস্কৃতিসহ রয়েছে অনেক ক্ষেত্রে অভিন্ন মিল। আমি আপনার এ সফরে আনন্দিত এবং আশা করছি সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে উদারতার এক মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আরাকান মুসলিমদের ওপর যে অবিচার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। তুরস্ক এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা এখন অনেকটাই হুমকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার অনুরোধ জানান তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক চার মিলিয়ন শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে, আর বাংলাদেশ এক মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। তিনি বলেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে মানবতার ইতিহাস তৈরি করেছেন আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঘনবসতিপূর্ণ দেশে মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের যেভাবে আশ্রয় দিয়েছেন, তাতে তাদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া উচিত।