হামিদুর রহমান: বিশ্ববাসীর সামনে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস। এর প্রতিশোধক তৈরিতে রাতদিন পরিশ্রম করছেন বিভিন্ন দেশের গবেষণকরা। এরই ধারাবাহিকতায় আবিষ্কার হয়েছে নতুন ওষুধ অ্যাভিগাম। জাপানের ফুজিফিল্ম তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি অ্যাভিগান অনুকরণে বাংলাদেশে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস ফেভিপিরা-২০০ নামক করোনা প্রতিরোধক ওষুধ প্রস্তুত করেন। যেটি প্রাথমিকভাবে ১০০ জনের ওপর প্রয়োগ করা হবে।
জানতে চাইলে বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইবায়দুল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ওষুধ প্রস্তুত সম্পন্নের পর ট্রায়ালের জন্য দেওয়া হয়েছে। আশা করছি কালকের (আজ) মধ্যেই সরকার ট্রায়ালে চলে যাবে। প্রাথমিকভাবে ১০০ জনের ওপর এটি প্রয়োগ করা হবে। জাপান ২০ টি দেশকে ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দিয়েছে।
নতুন করে আরও যারা ট্রায়ালের জন্য অনুমতি চাইবে তারা অনুমতি পাবে বলে জানিয়েছে জাপান। আমাদের সরকারের সঙ্গে জাপানের কথা হয়েছে। বাংলাদেশে এটি প্রয়োগে জাপানের আপত্তি নেই। ওষুধ প্রয়োগে সফলতা আসলে জাপানও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য, ওষুধটি প্রস্তুতের পেটেন্ট জাপানের হলেও অনুন্নত দেশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধটি প্রস্তুতের অনুমোদন দিয়েছে।
ইবায়দুল করিম আরও বলেন, প্রতিটি ট্যাবলের মূল্য পড়বে ৪০০ টাকা। একজন রোগীকে নূন্যতম ৪০ টি ট্যাবলেট খেতে হবে। এটি রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করবে। আমরা বড় পরিসরে উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। সবকিছু ঠিক থাকলে দ্রুতই উৎপাদনে যাবো।
বীকন ছাড়াও আরো কয়েকটি দেশীয় ওষুধ কোম্পানি এটি উৎপাদন করবে। জাপানে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের কিছুটা সঙ্কট থাকায় আপাতত চীন থেকে উপকরণ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
গবেষকরা দাবি করেছেন, করোনাকে কাবু করার সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন তারা। এরই মধ্যে ডজনখানেক ওষুধ যেমন ফেভিপিরা-২০০, রেমডেসিভির, ইন্টারফেরন আলফা টুবি, রিবাভিরিন, ক্লোরোনকুইনিন, লোপিনাভির এবং আরবিডল কোভিড-১৯ চিকিৎসার ওষুধের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। সরাসরি নভেল করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি না হলেও অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করা ড্রাগ করোনাভাইরাস ঠেকাতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ট্যাবলেট অ্যাভিগান জাপানের ফুজি ফিল্ম কোম্পানির সহযোগী ওষুধ কোম্পানি তয়োমা কেমিক্যাল। ট্যাবলেটটির জেনেরিক নাম ফ্লাভিপাইরাভির।
যেসব হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি আছে, সেখানে ওষুধটি পৌঁছে দেবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতিটি ট্যাবলেটের দাম ৪০০ টাকা হলেও এখন এটি বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে।
ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটি কভিভ-১৯ রোগের সুনিশ্চিত চিকিৎসা নয়, তবে ১২০ জন রোগীর ওপরে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাফল্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত তরুণ রোগীদের ওপর ওষুধটি ব্যবহার করে সাত দিনে এবং বয়স্কদের ওপর ব্যবহার করে নয় দিনে আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে।
ফ্লাভিপাইরাভির ওষুধটির সঙ্গে ওরভেসকো নামক আরও একটি ওষুধ মিলিয়ে ট্রায়াল করা হয়েছে। জাপান, তুরস্ক ও চীন ওষুধটি ব্যবহার করছে। কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের তিনটি পর্যায়- সাধারণ, মাঝারি ও মারাত্মক। এই তিন ক্ষেত্রেই ওষুধটি কার্যকর। গর্ভস্থ শিশুর ওপর ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে।
এখন পর্যন্ত এ ভাইরাস দমনে কার্যকর প্রমাণিত কোনো ওষুধ বের হয়নি। আবিষ্কার হয়নি কোনো ভ্যাকসিন বা টিকা। পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ভালো ফল আসায় উপরিউক্ত ওষুধগুলো করোনা চিকিৎসায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ।