Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:16 am

বাংলাদেশে ঢুকতে সবাইকেই পরীক্ষা করা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রাণনাশক নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এতদিন শুধু চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হলেও এখন তার পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। গতকাল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বাংলাদেশের বাইরে থেকে কেউ দেশে ঢুকলে বন্দরে ‘স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে’ বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।

ইতোমধ্যে করোনাভাইরাস চীন থেকে ২৪টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘চীন ছাড়াও আরও কয়েকটি দেশে স্থানীয়ভাবে একজনের দেহ থেকে আরেকজনে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরে আসা সবগুলো বিমানকেই স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে চীন এবং আরও কয়েকটি দেশের যাত্রীদের এই স্ক্রিনিং কার্যক্রমে আনলেই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এটা চালু করেছি। এটা সব দেশের ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই শুরু হয়েছে। তবে এটা নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটা বাড়তি সতর্কতা।’

৭ জানুয়ারি থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটা কতদিন ধরে চলবে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক।

বাংলাদেশের সবগুলো বন্দরে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আছে কি না এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, ‘বিভিন্ন এয়ারলাইনস, বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতায় এ কাজটি করা হচ্ছে। আমরা এয়ারলাইনসগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছি। ফ্লাইটের মধ্যে যে ডিক্লারেশন ফর্ম দেওয়া হয়, তাতে এয়ারলাইনসগুলো সহায়তা করে। আমরা সম্মিলিতভাবেই করছি। এখানে এয়ারলাইনসগুলোর সহযোগিতা খুবই জরুরি। যে বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েছি। থার্মাল স্ক্যানার ও হাত দিয়ে যেটা করা হয়Ñদুটোর কার্যক্রম একই।’

বিমানযাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যের একটি কার্ড পূরণ করতে হচ্ছে। থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষায় কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে বিমানবন্দরের পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চীন থেকে কেউ জ্বর না নিয়ে এলেও আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি কারও জ্বর আসে, তাদের আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল সকাল পর্যন্ত আট হাজার ৪৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করলেও কারও দেহে এখনও করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি।

চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ বাংলাদেশির মধ্যে আশকোনা হজক্যাম্পে থাকা ৩০১ জনের সবাই সুস্থ আছেন। সিএমএইচে থাকা ১১ জনের অবস্থাও ভালো বলে জানান ডা. ফ্লোরা।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজন নিয়ে ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘রোগী এবং রোগীকে যারা সেবা করবেন তারা ছাড়া আর কারও মাস্ক ব্যবহার করার কোনো প্রয়োজন নেই। চীনে অনেকে মাস্ক ব্যবহার করে ঘুরছে। এর কারণ, চীনে অনেকে আক্রান্ত বিধায় এই রোগ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি, কোনো ভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি। এ কারণে মাস্ক পরার কোনো প্রয়োজন নেই।’