`বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশেজ্ঞরা বলেছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যার সাত শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। যেখান থেকে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এ তথ্যকে গুরুত্ব সহকারে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে থ্যালাসামিয়া মুক্ত করতে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে। এক বাহক আরেক বাহককে বিয়ে করা যাবে না। দেশকে থ্যালাসামিয়া মুক্ত করতে সরকারকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেল বিশ্ব থ্যালাসামিয়া দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলোজি বিভাগের উদ্যোগে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা জিএম কাদের। সেমিনারে সাইন্টেফিক পেপার উপস্থাপন করেন হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ।

সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন রোটারিয়ান ইঞ্জিনিয়ার এম এ ওয়াব, ডিসট্রিক গভর্নর 3281, হেমাটোলোজি বিভাগের অধ্যাপক এবিএম ইউনুস, অধ্যাপক এম এ আজিজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের হেমাটোলোজি বিভাগের চেয়ারম্যান অখিল রঞ্জন বিশ্বাস, বিএসএমএমইউ-এর হেমাটোলোজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক শাহজাদা সেলিম। অনুষ্ঠানে সাইন্টেফিক পার্টনার ছিল নভোরটিস বাংলাদেশ লিমিটেড এবং মিডিয়া পার্টনার ছির একাত্তর টিভি।

জিএম কাদের বলেন, থ্যালাসামিয়া বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এটা আমাদের দেশেও বিপুল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি থ্যালাসামিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক প্রকোপ ধারণ করেছে।

তিনি বলেন, থ্যালাসামিয়া সংক্রান্ত আসল সমস্যা সরকারকে সমাধান করতে হবে। বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও এটা কোনোভাবেই সমাধান হবে না। বর্তমানে থ্যালাসামিয়া বন্ধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। বর্তমানে জবাবদিহিতা ছাড়াই অনেককিছু চলছে।

তিনি বলেন, থ্যালাসামিয়া রোগীদেরকে সরকারিভাবে নানা সহযোগিতা করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রে থ্যালাসামিয়ার বাহক কিনা সেটা সংযুক্ত করতে হবে। এজন্য মানুষের মাষে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। শুধু আইন করে এটা করা যাবে না।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, বিয়ের পাত্র-পাত্রী উভয়ই যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হয়, তাহলে সন্তানও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হবে। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়ার উপস্থিতি শনাক্তে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম আরও বাড়াতে হবে ও জানান চিকিৎসকরা।

উপাচার্য তার বক্তব্যে থ্যালাসেমিনয়া রোগ নির্ণয়ের স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে জিন থেরাপি, স্টেম সেল থেরাপি এ ধরনের চিকিৎসাসেবার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, রোগীদের চিকিৎসাসেবার জন্য যাতে দেশের বাইরে যেতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তিনি থ্যালাসেমিনয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

অধ্যাপক সালাউদ্দিন শাহ বলেন, সেমিনারে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ১০ শতাংশের অধিক মানুষ থ্যালাসেমিয়া অথবা হিমোগ্লোবিন ই-এর বাহক। একই প্রক্ষেপণে ধারণা করা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৯ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং এদেশে ষাট থেকে সত্তর হাজার রোগী বিটা থ্যালাসেমিয়া অথবা হিমোগ্লোবিন ই রোগ নিয়ে বসবাস করছে।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া রোগ রক্তের হিমোগ্লোবিনের গ্লোবিন জিনের বংশগত ত্রুটির কারণে হয়ে থাকে। ফলশ্রুতিতে থ্যালসেমিয়া রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকে এবং রক্তের মাধ্যমে শীররে অক্সিজেন ও পুষ্টি পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে শরীরের বৃদ্ধি কম হয় এবং বিভিন্ন হাড়ের গঠনে বিকৃতি দেখা দিতে পারে। বারবার রক্ত নিয়ে এ সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এক্ষেত্রে শরীরে অতিরিক্ত আয়রণ জমা হতে থাকে এবং লিভার, হৃদপিন্ডসহ বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। বাবা মা উভয়ে বাহক হলেই সাধারণত সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ে পরিহার করা সম্ভব হলে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা কমানো সম্ভব হতে পারে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০