বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ভারত চীন রাশিয়ার চেয়ে বেশি

ইসমাইল আলী: দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ২০২০ সালের পর থেকে দ্রুত বাড়ছে। এর মধ্যে দেড় বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৭৩ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এ ব্যয় প্রায় ১১ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এতে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ভারত, চীন, রাশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। তবে গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোর জন্য বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় এখনও ২০ টাকায় ঠেকেনি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, দেশে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের অর্ধেক বা তার বেশি এখনও পাওয়া যায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে। আর এ কেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় চার টাকার আশেপাশেই রয়েছে। তবে অন্যান্য জ্বালানির ক্ষেত্রে তা ১৪ থেকে ৩২ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। যদিও ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যয় তুলনামূলক কমই পড়ছে, তবে আদানির বিদ্যুৎ আসার পর ভারত থেকে আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যাবে।

এপ্রিলের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। বৈঠকের জন্য চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের হিসাব নিরূপণ করে পিডিবি। এতে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছর ছয় মাসে নিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল (আমদানিসহ) চার হাজার ৩১৮ কোটি ৩০ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ১৯৯ কোটি দুই লাখ টাকা। অর্থাৎ ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় পড়েছে ১০ টাকা ৯৩ পয়সা।

এদিকে গত ডিসেম্বরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয়ের চিত্র প্রকাশ করে অনলাইনভিত্তিক বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভিজুয়াল ক্যাপিটাল। তারা জানায়, বর্তমানে বিশ্বে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে কম ইরান, সুদান ও লিবিয়ায়। দেশ তিনটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড়ে ব্যয় হচ্ছে এক সেন্ট বা এক টাকা সাত পয়সা (ডিসেম্বরের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ১ ডলার = ১০৭ টাকা ধরে)। এছাড়া ইথিওপিয়াতেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় এক সেন্ট বা ১ টাকা সাত পয়সা।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের দিক থেকে এর পরে রয়েছে অ্যাঙ্গোলা। দেশটিতে এ ব্যয় দুই সেন্ট বা দুই টাকা ১৪ পয়সা। আর তিন সেন্ট বা তিন টাকা ২১ পয়সা নিয়ে এর পরের অবস্থানে ছিল মিয়ানমার, ওমান ও মিসর। আলজেরিয়া ও আর্জেন্টিনায় এ ব্যয় চার সেন্ট বা চার টাকা ২৮ পয়সা। একইভাবে জিম্বাবুয়ে, ইউক্রেন ও কাজাখস্তানেও বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৪ টাকা ২৮ পয়সা। সৌদি আরব ও নাইজেরিয়ায় গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পাঁচ সেন্ট বা ৫ টাকা ৩৫ পয়সা। ভারত ও তুরস্কে এ ব্যয় সাত সেন্ট বা ৭ টাকা ৪৯ পয়সা। আর আট সেন্ট বা ৮ টাকা ৫৬ পয়সা উৎপাদন ব্যয় চীন, রাশিয়া ও কঙ্গোয়।

ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, বেলারুশ, তাইওয়ান ও মেক্সিকোতে গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ৯ সেন্ট বা ৯ টাকা ৬৩ পয়সা। এছাড়া তানজানিয়া ও বতসোয়ানাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ১০ সেন্ট বা ১০ টাকা ৭০ পয়সা। তবে অন্যান্য দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে নামিবিয়া ও কানাডায় ১১ সেন্ট বা ১১ টাকা ৭৭ পয়সা। বাকিগুলোর মধ্যে ইউরোপের কিছু দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় সবচেয়ে বেশি।

এদিকে পিডিবির তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে জলবিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় ছিল দুই টাকা চার পয়সা, গ্যাসে চার টাকা ১৬ পয়সা, কয়লায় ১৬ টাকা ৭২ পয়সা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ১৪ টাকা ৩১ পয়সা, ফার্নেস অয়েলে ১৯ টাকা ৯২ পয়সা এবং ডিজেলে ৩২ টাকা ২৮ পয়সা। এছাড়া ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে ইউনিটপ্রতি ব্যয় পড়েছে সাত টাকা ৬০ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০