নিজস্ব প্রতিবেদক: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেছেন, বাংলাদেশ ও কাতারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সুযোগ বাড়াতে ট্যাক্স ও শুল্ক প্রণোদনাসহ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে বিবেচনা করে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য দুই দেশকেই এগিয়ে আশা উচিত। তিনি বলেন, কাতারের সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি, হালাল ইকোসিস্টেম, পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি, স্টার্ট-আপস, উদ্ভাবনী জ্ঞান ও রিসোর্স শেয়ারের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবেন। গত বুধবার বাংলাদেশ ফোরাম কাতার ও দোহা ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ‘কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ও সমন্বয়মূলক সুযোগ’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে ১৬০ মিলিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার রয়েছে। সাউথ এশিয়া অ্যাসোসিয়েশন রিজিওনাল কোঅপারেশনের (সার্ক) অধীনে সাউথ এশিয়া ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (সাফটা) অনুযায়ী আমাদের ১.৮ বিলিয়ন মার্কেট অ্যাক্সেস ব্যবস্থা রয়েছে। এদিকে অস্ত্র ছাড়া (ইবিএ) এর সবকিছুতেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, চীন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, এশিয়া প্যাসিফিক ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্টের (এপিটিএ) মাধ্যমে বেশ কিছু অতিরিক্ত বাজারেও শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত (ডিএফকিউএফ) অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে।
দুই দেশের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক ও সেবা, জ্বালানি অংশীদারিত্ব এবং মানব উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এফএমসিজি, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, চামড়া, জুতা, ফার্মাসিউটিক্যালস, সিরামিক ও আইসিটি রপ্তানির মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবসায়ের জন্য বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করার সুযোগ রয়েছে।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিন্মমুখী প্রবণতার কারণে সরকারি ব্যয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় অর্থ সঞ্চালন বাড়ানোর ব্যবস্থা, সামাজিক সুরক্ষা নেট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ৪৫ মিলিয়ন মানুষকে খাদ্য সহায়তা, ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ অর্থ হস্তান্তর, ব্যাংকিং খাতে তারল্য বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতার ব্যবস্থা, সব ঋণের ওপর দুই মাসের জন্য ১% সুদের হার মওকুফ, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া সব ঋণ পরিশোধ স্থগিত ও সব প্রকার ঋণের সুদের হার বণ্টক এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ অনুমোদন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ নিশ্চিত করা এবং বৃহত্তর খাতগুলোয় প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পাদন করতে ব্যাংকিং খাতগুলো আরও সহজতর করার পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয়ের নীতিগত হস্তক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী নাসের এজাজ বিজয় বলেছন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা এশিয়ার সবচেয়ে আড়ালে থাকা একটি বিষয়। তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ছয়টি চালিকাশক্তি পোশাক শিল্প, বাণিজ্য, রেমিট্যান্স, বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো এবং ডিজিটাল স্পেসের বিষয় তুলে ধরে বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশ ৪০০% প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
ওয়েবিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আশুদ আহমেদ। তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ ও কাতারের সম্পর্ক শ্রমের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশ সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জন্য চমৎকার সুযোগ-সুবিধা এবং প্রণোদনা দিয়ে আসছে; কাতার বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে পারে।
ওয়েবিনারে দোহা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ডা. আর সিথারামান বলেন, বিনিময় ও রিফান্ডের ক্ষেত্রে আমাদের পরিচিতি রয়েছে এবং একইভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগ করতে পারে। আমরা এখন বাংলাদেশে তারল্য বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। তিনি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাতারে অবকাঠামো স্থাপন এবং কাতারের শিল্পাঞ্চল ও মুক্ত অঞ্চল থেকে একটি বৈশ্বিক প্রবেশদ্বার তৈরি করার আহ্বান জানান।