Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:41 pm

বাংলাদেশে শেভরনের ব্যবসা কিনে নিচ্ছে হিমালয় এনার্জি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরনের বাংলাদেশি গ্যাসক্ষেত্রগুলো কিনে নিচ্ছে একটি চীনা কোম্পানি। হিমালয় এনার্জি নামে ওই কোম্পানিটির কাছে সবগুলো প্রকল্প বেচে বাংলাদেশ ছাড়ছে আলোচিত বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। এগুলো হলো বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র।

গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শেভরনের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, শেভরন করপোরেশন বাংলাদেশে তাদের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে হিমালয় এনার্জির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। তবে কত টাকায় এ ব্যবসা হাতবদল হচ্ছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশে শেভরনের তিনটি গ্যাসক্ষেত্রের সমুদয় মূল্য ২০০ কোটি ডলারের মতো।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল বাংলাদেশে তাদের মালিকানাধীন গ্যাসক্ষেত্র এবং ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিনসের জিওথারমাল প্রকল্পগুলো বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার সঙ্গে উৎপাদন ও বণ্টন চুক্তির (পিএসসি) আওতায় ওই তিনটি ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে আসছে শেভরন। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তিন ক্ষেত্র থেকে তারা প্রতিদিন গড়ে ৭২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করে আসছে, যা বাংলাদেশের প্রতিদিনের গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৫৫ শতাংশ। এছাড়া উপজাত (বাইপ্রডাক্ট) হিসেবে এসব ক্ষেত্র থেকে তিন হাজার ব্যারেল তরল হাইড্রোকার্বন উৎপাদন করে আসছে শেভরন। সূত্র জানায়, গত দুই বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় লোকসান সামাল দিতে শেভরন বাংলাদেশের তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আলোচনা শুরুর পর থেকেই কোম্পানিটি বাংলাদেশে কর্মরত তাদের কর্মীদের ছ্াঁটাই শুরু করে। এরই মধ্যে অধিকাংশ কর্মীকে ছ্াঁটাই করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন তাদের অধিকাংশ কর্মীই অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলে প্রথমবারের মতো এনার্জি খাতে বড় মাপের চীনা বিনিয়োগ প্রবেশ করবে। হিমালয় এনার্জি নামের এই ক্রেতা কোম্পানিটি হচ্ছে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান জিনহুয়া অয়েলের অংশ। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে রয়টার্স জানিয়েছিল, জিনহুয়া অয়েলের সঙ্গে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে শেভরন।

চীনা কোম্পানির বরাতে খবরে আরও বলা হয়েছে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের মাধ্যমে ক্রয় চুক্তিটি বাস্তবায়ন হবে। এদিকে বাংলাদেশে অবস্থিত এসব গ্যাসক্ষেত্র কেনাবেচার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার আছে বলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গেও শেভরনের আলোচনা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বরাতে শেভরনের মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার এসব প্রকল্প কেনা লাভজনক হবে কিনা তা মূল্যায়ন করছে। পরামর্শ প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন তারা। তিনি আরও বলেন, ‘শেভরন আমাদের অনুরোধকে সম্মান করবে বলে আমরা আশা করি।’ শেভরনের মুখপাত্রও স্বীকার করেছেন যে, ‘বাংলাদেশ সরকার নতুন মালিকের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে সমালোচনামুখর।’ এজন্য তারা ঢাকার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।