বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। এ সংকট মোকাবিলায় শুরুতে ডলারের দাম বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এতে সংকট আরও বেড়ে যায়। ডলারের দাম ধরে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে দেশের ব্যাংক খাতে তারল্যসংকট তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল অর্থমন্ত্রী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় এ কথা বলেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক চেষ্টায় বাজারে সাময়িক তারল্য সৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নেয়া ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২০ সালে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ওই সময় কভিড-১৯ মহামারিতে পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ে, ফলে প্রবাসী আয় বৈধপথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসে। আমদানিও কমে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। তবে সে স্বস্তি বেশি দিন থাকেনি। গত বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ। চলতি মাসে তা সাত বছরে সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে।

তবে আগমী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে অল্প সময়ের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা বা রিজার্ভ বাড়ানোর আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরের ৮.৬ শতাংশ থেকে ২০২১-২২ সময়ে আমদানি ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কমে যায়। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি ২০২০-২১ অর্থবছরের ৪ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার হতে বেড়ে ২০২১-২২ সময়ে ১৮ দশমিক

৬ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে। পাশাপাশি, রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন ও বৈদেশিক সাহায্যনির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ফলে আর্থিক হিসাবও নেতিবাচক অবস্থানে চলে আসে। চলতি হিসাব ও আর্থিক হিসাবের যুগপৎ ঘাটতি লেনদেনে ভারসাম্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।’

বর্তমানে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন ডলার, যা সাড়ে চার মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

তিনি বলেন, সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে লেনদেনের ভারসাম্যে অস্থিতিশীলতা কমে এসেছে। আগমী অর্থবছরও এ বিষয়ে আমরা সতর্ক থাকব এবং সংকুলানমূলক নীতি গ্রহণ করব। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠনের জন্য সঠিক মূল্যে পণ্য আমদানি নিশ্চত করা এবং ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তি বিধিনিষেধ আরোপ, বাস্তবায়ন ও নজরদারি আগামীতেও চলমান থাকবে।

রিজার্ভ বাড়ানো প্রসঙ্গে প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রবাসী আয় বাড়াতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা রাখা হয়েছে। সহজে যাতে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারে এর জন্য মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসহ (এমএফএস) অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক ও একচেঞ্জ হাউজের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে সব ফি মওকুফ করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ নেয়ার ফলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আমদানি প্রবৃদ্ধি অস্বাভাবিক হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে। একই সঙ্গে রপ্তানি আয় বাড়াতে উপযোগী কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাইপলাইনে থাকা বৈদেশিক অর্থায়ন ছাড়করণে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে অল্প সময়ের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও ভালো অবস্থায় চলে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। বিশাল এ বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০