Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:09 am

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন: সিকিউরিটিজের স্বল্পতার কারণেই আইপিওতে বেশি আবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৬ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ৬৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকার মেয়াদি শিল্পঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট ও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ৪৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়। আইপিওর ক্ষেত্রে গড়ে ১৬ গুণ বেশি আবেদন পড়েছে। নতুন সিকিউরিটিজের স্বল্পতার কারণেই এত বেশি আবেদন পড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সম্প্রতি প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে পুঁজিবাজার সম্পর্কে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর সম্পদ-ইক্যুইটি, ডিবেঞ্চার (সরকারের ইসলামী বিনিয়োগ বন্ড ছাড়া) দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা, যা এর আগে ২০১৫ সালে ছিল ২০ হাজার ২১০ কোটি টাকা।
২০১৬ সালে সেকেন্ডারি মার্কেটের স্থিতি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১৬ সালে বাজার মূলধন বিবেচনায় উৎপাদন খাত সবার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আলোচ্য সময়ে উৎপাদন খাতের অবদান ছিল ৪২.৬১ শতাংশ। তাছাড়া এ সময়ে মোট বাজার মূলধনের তুলনায় সেবা ও বিবিধ খাত ৩২.৩৮ শতাংশ, আর্থিক খাত ২৪.৫৯ শতাংশ এবং করপোরেট বন্ড খাতের ০.২২ শতাংশ অবদান ছিল। এছাড়া ডিএসইর বাজার মূলধন বিবেচনায় জিডিপিতে অবদান ছিল ১৮.৪০ শতাংশ এবং সিএসইর ১৪.৫০ শতাংশ।
অনাবাসী বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিও বিবেচনায় ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বিনিয়োগ কমেছে। যেখানে ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে অনাবাসী বিনিয়াগকারীরা ৪ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে সেখানে ২০১৬ সালে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা।
তাছাড়া প্রতিবেদনে পুঁজিবাজার উন্নয়ন এবং বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময়ে পুঁজিবাজারসংক্রান্ত যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বে-মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ডে রূপান্তর-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন, পুঁজিবাজার-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, নারী বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ, দ্বিপক্ষীয় ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য বিএসইসি ও সেবির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ-সংক্রান্ত নির্দেশনা, ফাইন্যান্সিয়াল ডেরিভেটিভ গাইডলাইন এবং ইটিএফ বিধিমালা প্রণয়ন।
এর আগে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের বিরাজমান মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার যে সাম্প্রতিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সুদৃঢ় নিয়ন্ত্রণে সুস্থ ধারা বজায় থাকা প্রয়োজন। তা না হলে অতীতের মতো এবারও প্রলুব্ধ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের সতর্কতামূলক উপদেশ প্রদান এবং আর্থিক সুরক্ষার পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ সময় গভর্নর আরো বলেন, উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার এবং অস্বাভাবিক উচ্চ পিই রেশিওধারী শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ প্রদানের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা এক্ষেত্রে বাঞ্ছনীয় হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সতর্ক পদক্ষেপ হিসেবে আইনে নির্দেশিত মাত্রার মধ্যে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সীমাবদ্ধ রাখতে নজরদারি জোরদার করেছে। তাছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে সঠিক খাতে ব্যবহার না করে অস্বাভাবিক লাভের আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কি না, সেদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নজরদারি জোরদার করতে হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, পুঁজিবাজারের অতীতের উত্থান-পতন এবং বর্তমান অবস্থার কারণ নির্ণয় নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ নয়। এটি নিয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কাজ করছে।