বাংলাদেশ ব্যাংকে বদলির হিড়িক

মেহেদী হাসান: সাত থেকে আট বছর পর ব্যাপকহারে রদবদল করা হচ্ছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে। দীর্ঘদিন পর বড় ধরনের বদলির ঘটনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। আবার পছন্দের বিভাগে পদায়ন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, সাধারণত ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি পাঁচ বছর পর এবং অন্যান্য কর্মকর্তাকে প্রতি তিন বছর পর বদলি করা হয়। তবে সাত-আট বছর ধরে দীর্ঘদিন একই বিভাগে বহাল রয়েছেন অনেক কর্মকর্তা, যাদের এখন বদলি করা হচ্ছে। একমাত্র বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ছাড়া সব বিভাগের কর্মকর্তাদেরই বর্তমানে বদলি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত ছয় মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত মহাব্যবস্থাপক, উপ-মহাব্যবস্থাপক, যুগ্ম পরিচালক এবং উপ-পরিচালক পদের ১৫০ জনের বেশি কর্মকর্তাকে বদলি ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
চলতি জুলাইয়ে ইন্টারনাল অডিট ডিপার্টমেন্ট, আইন বিভাগ, ডিপার্টমেন্ট অব অফসাইট সুপারভিশন, অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্ট, ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স ডিপার্টমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট, ফরেন এক্সচেঞ্জ অপারেশন ডিপার্টমেন্ট, এক্সপেন্ডিচার ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-১, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগ, হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট, ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট, কমন সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট-১, ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্ট, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪, ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট বিভাগ, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, গবেষণা বিভাগ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের ৩৬ যুগ্ম ও উপ-পরিচালককে বিভিন্ন বিভাগে বদলি করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর বদলির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অধিকাংশ কর্মকর্তা। কয়েকজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানান, বদলি একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। বিভিন্ন কারণে হয়তো দীর্ঘদিন এটি বন্ধ ছিল। একজন কর্মকর্তাকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সব ধরনের কাজ জানা প্রয়োজন। তাকে যেমন সব বিষয়েই দক্ষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে, তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও বিকল্প কর্মকর্তা তৈরি করতে হবে। ব্যাংকারের কাজে বৈচিত্র্যেরও প্রয়োজন রয়েছে, যা একজন ব্যাংকারকে পরিপূর্ণ করে তোলে। অন্যদিকে বদলির আদেশে নীরব ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। মূলত কম গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে বদলি করার কারণে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। ব্যাংকগুলোর জালিয়াতি ধরতে এবং গ্রাহক হয়রানি বন্ধে ২০১২ সালে এফআইসিএসডি নামে পৃথক এই বিভাগ চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুরুতে পরিদর্শনের মাধ্যমে বড় অঙ্কের বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা উদ্ঘাটন করে আলোচনায় আসে বিভাগটি, কিন্তু সেই পরিদর্শন কার্যক্রম দুই বছরের ব্যবধানে কমে গেছে প্রায় ৩৩ শতাংশ। এফআইসিএসডির বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এই বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তাকে সম্প্রতি বদলি করা হয়েছে, পরিদর্শন কার্যক্রমে যারা দক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এসব কর্মকর্তা না থাকায় পরিদর্শন টিম গঠন করা কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এই বিভাগে কর্মরত কয়েকজন কর্মকর্তা।
দীর্ঘদিন পরে ব্যাপকহারে এই বদলির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, কর্মকর্তা স্বল্পতা এবং বিকল্প না থাকায় এতদিন তাদের বদলি করা সম্ভব হয়নি। তবে বর্তমানে বেশকিছু নতুন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার ফলে একসঙ্গে অনেককে বদলি করা হচ্ছে।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০