বাংলাদেশ ব্যাংক-বাফেদা বৈঠক: ডলারের দাম কমিয়ে স্থিতিশীল রাখতে বাফেদার আশ্বাস

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: রমজানের আগেই হঠাৎ বেড়ে যাওয়া ডলার মূল্য ফের কমিয়ে স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আশ্বাস দিয়েছে আন্তঃব্যাংকিং বৈদেশিক মুদ্রাবাজার সমন্বয়কারী ব্যাংকগুলোর জোট বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা)। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাফেদার নেতারা এ আশ্বাস দেয়।

হঠাৎ ডলারের মূল্য বাড়ার কারণ দর্শানো ও তা বন্ধে প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণে আয়োজিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. ফজলে কবির। এ সময় বাফেদার চেয়ারম্যান ও মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ নূরুল আমিনসহ অ্যাসোসিয়েশনের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ডলারের দাম বাড়ার কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ দর্শাতে পারেননি বাফেদা নেতারা। তবে আগামীতে যেন ডলারের দাম এমন বেড়ে বাজার অস্থিতিশীল না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন নেতারা। নেতারা ডলার বেচাকেনায় বিদ্যমান নিয়ম  ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন যথাযথভাবে পালনে সচেষ্ট হবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে নেতারা ডলারের দাম বাড়ার সম্ভাব্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন। কারণগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া, অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণ পরিশোধ বেড়ে যাওয়া ও রমজান সামনে রেখে পণ্যের আমদানি বেড়ে যাওয়াকে তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ওপর সুনির্দিষ্ট নীতিমালাও দাবি করেছেন বাফেদা নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ নূরুল আমিন শেয়ার বিজকে বলেন,  ডলারের দামে এমন উত্থান-পতনে  পদ্ধতিগত কারণ থাকতে পারে। যুক্তি যা-ই হোক হঠাৎ করে প্রতি ডলারে তিন টাকা বাড়াটা সমর্থনযোগ্য নয়। আবার একদিনে দুই টাকা কমিয়ে দেওয়াটাও সমর্থন করা যায় না। এ ব্যাপারে একটা সীমা থাকা উচিত। এতে সাম্প্রতিক সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক, অস্বাভাবিকভাবে দর বৃদ্ধির কারণ নেই।

বাফেদা নেতারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম হলো ডলার উদ্বৃত্ত হলে শুধু বিক্রি করতে হবে। আর যেদিন কেনা হবে সেদিন বিক্রি করা যাবে না। এখানে যদি দৈনিক বেচাকেনা থাকতো, তাহলে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এসবের বাইরে বেসরকারি খাতে আমরা যে ঋণ নিয়েছি, তার পরিশোধ বেড়ে থাকতে পারে। সরকারের পরিশোধও বেড়ে থাকতে পারে। সেটা হতে পারে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণ বা বিভিন্ন পণ্যের জন্য এলসির দায় পরিশোধ। এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকসহ কোম্পানিগুলো তাদের লভ্যাংশের একটি অংশ দেশের বাইরে নেওয়ার ফলে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। নেতারা আরও জানান, বৈদেশিক মুদ্রাবাজার শুধু আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভরশীল। এখানে বিদেশি বিনিয়োগ তেমন নেই। অন্য দেশেও ডলারে বিনিয়োগ নেই। ফলে যার যখন দরকার হয়, সে তখন বেশি দামে হলেও কিনতে চায়। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর ডলার আহরণ কম থাকায় তারা সব সময় কিনে চাহিদা মেটায়। বিক্রেতা ব্যাংক সাময়িকভাবে ডলার বিক্রি বন্ধ রাখলেই তখন ভয় পেয়ে গিয়ে রেমিট্যান্স কোম্পানি বা অন্য ব্যাংক থেকে বেশি দামে ডলার কেনার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

প্রসঙ্গত, ডলারের দাম বাড়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকার্স সভায় তা কমিয়ে ৮২ টাকার নিচে আনতে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি ডলার বাজার এমন অস্থিতিশীল হওয়ার কারণ উদ্ঘাটন ও করণীয় নির্ধারণে গতকাল রোববার বৈঠকের কথা জানানো হয় বাফেদা নেতাদের। সে অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত গতকালের ওই বৈঠকে ডলার বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়া হয়।

পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য চলতি মাসের প্রথম দিনে ব্যবসায়ীরা পরিশোধ করেছেন ৮০ টাকা। গত বুধবার আমদানি দায় মেটাতে প্রতি ডলারের দাম ৮৫ টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়েছে আমদানিকারকদের। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংকভেদে ডলারের মূল্য চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে যাওয়ার কারণে তা কমিয়ে ৮২ টাকার নিচে নিয়ে আসতে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তথ্যমতে, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে বিদেশি খাতের সিটি এনএ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক বুধবার প্রতি ডলারের জন্য নিয়েছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এইচএসবিসি নিয়েছে ৮৪ টাকা ৭৫ পয়সা। এছাড়া এবি ব্যাংক প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ২০ পয়সা, সাউথইস্ট ব্যাংক ৮৩ টাকা ৮৫ পয়সা। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তঃব্যাংক গড় হিসেবে বুধবার প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য ছিল ৭৯ টাকা ৯৫ পয়সা। একইভাবে ব্রিটিশ পাউন্ডের দাম বাড়িয়ে বুধবার সিটি এনএ প্রতি পাউন্ড বিক্রি করেছে ১১০ টাকা ৪১ পয়সা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০