ক্রীড়া প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনের শুরুটা আজ থেকে দুই বছর আগে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বগুণে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছিল টাইগাররা। কিন্তু সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাজে আম্পারিংয়ে ভারতের কাছে হেরে বসে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। চলতি আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আবারও লাল-সবুজ প্রতিনিধিদের সামনে সেই ভারত। মঞ্চটা এবার ভিন্ন। আরেকটি ইতিহাস গড়ার হাতছানি সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমদের সামনে। আজ জিতলেই যে টিম টাইগার্স উঠে যাবে এ টুর্নামেন্টের ফাইনালে। তবে এ নিয়ে কোনো ভাবনা নেই ম্যাশ বাহিনীর। সবাই চাই ম্যাচটাকে উপভোগ করতে, নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে।
সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ লড়াই জমে উঠে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে। যার শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে। একই বছর দেশের মাটিতে বিরাট কোহলিদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে ক্রিকেট বিশ্বে সাড়া ফেলেছিল মাশরাফিরা। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে প্রতিবেশী দেশটির কাছে লড়াই করেই হেরেছিল টাইগাররা। একই বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের কাছে অবিশ্বাস্যভাবে এক রানের হার অনেকদিন ধরেই মনে থাকবে হাথুরুসিংহে শিষ্যদের। তবে সেসব এখন স্মৃতি। সেগুলো পেছনে ফেলে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা চান শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।
নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতেও দারুণ ছন্দে রয়েছে টাইগাররা। প্রথম ম্যাচে তামিম ইকবালের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০৫ রান করে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। যদিও বাজে বোলিংয়ে ফল নিজেদের অনুকূলে আসেনি মাশরাফিদের। পরের ম্যাচেও জ্বলে ওঠেন তামিম। সেঞ্চুরি থেকে ৫ রান দূরে থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফেরেন সাজঘরে। ওই ম্যাচে অবশ্য বৃষ্টির কারণে ১ পয়েন্ট পায় বাংলাদেশ, যা সেমিফাইনালের পথে কিছুটা এগিয়ে দেয় লাল-সবুজদের। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ২২৪ রানের রেকর্ড জুটিতে ৫ উইকেটে জিতে যায় টিম টাইগার্স।
এদিকে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছে ভারত। বিশ্বের যে কোনো দলের বোলিং লাইন-আপকে চুরমার করতে পারে দলটির ব্যাটিং। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে বিরাট কোহলিদের বোলিং আক্রমণও দারুণ। বলা যায় বাংলাদেশকে আজ কঠিন লড়াইয়ে পড়তে হচ্ছে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সহজ জয়ে সেমিতে ওঠে ভারত। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দলটি হেরেছিল ৭ উইকেটে। সেখান থেকে পের না পেতে পারে টাইগাররা। লঙ্কানরা যদি ভাঙাচোরা দল নিয়ে ভারতকে হারাতে পারে, তবে আমরা কেন পারবো না? এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ৩৩ বার ওয়ানডেতে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ। যেখানে ৫ জয়ের বিপরীতে টাইগারদের হার ২৬ ম্যাচে। অন্য দুটি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে হয়েছিল পরিত্যক্ত।
১৯৮৮ সাল থেকে ভারতের বিপক্ষে খেলে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রতিবেশী দেশটির বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম ওয়ানডে জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে দীর্ঘ ১৬ বছর। ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতকে প্রথমবার ১৫ রানে হারিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। এরপর ২০০৭ বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ৫ উইকেটে হারিয়ে ভারতকে বিদায় দিয়েছিল টাইগাররা। পরের তিন জয় দেশের মাটিতে ২০১২ ও ২০১৫ সালে।
বাংলাদেশ-ভারত সর্বশেষ ওয়ানতে মুখোমুখি হয়েছিল ২০১৫ সালে। ৩ ম্যাচের ওই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। যে সিরিজে ১৩ উইকেট নিয়ে বিরাট কোহলিদের একাই গুঁড়িয়ে দিয়েছেন টাইগার তরুণ তুর্কি মোস্তাফিজুর রহমান। আজও তার দিকেই চোখ থাকবে সবার। সাম্প্রতিক সময়ে এ বাঁহাতি পেসার ঠিক নিজেকে খুঁজে পাচ্ছেন না। কিন্তু প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে জ্বলে উঠতে চান তিনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে মাঠে নামার আগে কাটারমাস্টার এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘বোলিংয়ে সব সময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। যদি সবাই ভালো করতে পারি, আশা করি এ ম্যাচে ভালো কিছুই হবে।’
এদিকে বাংলাদেশকে এক রকম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। আজকের ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন, আমরা তাদের নিয়ে ভাবছি না। এজবাস্টন আমাদের ঘরের মাঠের মতোই মনে হয়। এখানে আমাদের অতীতের ভালো কিছু স্মৃতি রয়েছে। আশা করি, আমাদের জন্য ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে সেখানে।’
ভারতের বিপক্ষে ভালো করতে হলে বাংলাদেশকে জ্বলে উঠতে হবে সব বিভাগেই। আগে ব্যাট করলে প্রতিপক্ষকে বড় রানের টার্গেট ছুড়ে দিতে হবে। পরে ব্যাট করলেও বড় স্কোর তাড়া করতে হবে মাশরাফিদের। সেটা কিন্তু বলায় যায়। কেননা এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রায় ম্যাচগুলোই হচ্ছে বড় স্কোরের। হয়তো আজ এজবাস্টনে সেটায় হবে। তাছাড়া এ মাঠের উইকেটে রয়েছে প্রচুর রান। প্রথম দিকে হয়তো পেস বোলাররা বাড়তি কিছু সুবিধা পেতে পারেন। পরে কিন্তু ঠিকই ব্যাটসম্যানদের বড় স্কোর গড়তে ভূমিকা রাখবে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দ্বিতীয় সেমিফাইনাল এরই মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়েছে বারুদের গন্ধ। কিন্তু সেদিকে কান পাতছেন না হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। কোচের একটায় মন্ত্র, আজকের ম্যাচটি উপভোগ করো। হয়তো এই মন্ত্রে উদ্দীপ্ত হয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়েই আজও আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হবে টিম টাইগার্স। না হলেই বা ক্ষতি কিসে?
Add Comment