বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু চুক্তির নয়, আস্থা ও শ্রদ্ধার: শেখ হাসিনা

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কাজের প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়, তা সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধায় বিস্তৃত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়ার বার্ষিকী ‘মৈত্রী দিবসে’ গতকাল ধারণ করা এক ভিডিও বার্তায় একথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে। এটি আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের যাত্রায় মাইলফলক। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০২১ সালের ২৬-২৭ মার্চ বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা ও নয়াদিল্লিসহ ১৮টি নির্বাচিত শহরে যৌথভাবে এ সম্পর্কের উদযাপন ও ৬ ডিসেম্বরকে ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হন দুই নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ ও দুই লাখ নির্যাতিত মা-বোনের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ও দেশটির জনগণের আত্মত্যাগের কথাও গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর ১৯৭২ সালের ভাষণ উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে, যা সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ও ভারতের বন্ধুত্ব আমাদের হƒদয়ে। মৈত্রীর এ বন্ধন সুদৃঢ় ও দীর্ঘস্থায়ী হবে।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, তার সরকার, অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের ও সামগ্রিকভাবে ভারতের জনগণের উদারতার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার ঠিক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর শুরু হয় প্রবাসী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ।

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মিত্রবাহিনীর কাছে ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ওই যুদ্ধে ১ হাজার ১৬১ ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কোটির বেশি শরণার্থী সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্যগুলোয় আশ্রয় নিয়েছিল; মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও হয়েছিল ওইসব এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দিয়েছিল প্রতিবেশী ভারত।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের এক কোটি উদ্বাস্তুর আবাসনের ব্যবস্থা করে তারা মুজিবনগর সরকারের জন্য জায়গা দেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বদরবারে কূটনৈতিক প্রচারণাও চালান। কাজের সম্পর্কের জন্য দরকারি আনুষ্ঠানিক কাঠামো প্রদানকারী চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মধ্যে আমাদের সম্পর্ক সীমাবদ্ধ নয়। গতিশীল, ব্যাপক ও কৌশলগত আকার ধারণ করে পরিপক্ব হয়েছে আমাদের বিস্তৃত অংশীদারিত্ব, যার ভিত্তি সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক ‘ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা ও ধর্মনিরপেক্ষতার সাধারণ মূল্যবোধ এবং আরও অগণিত সামঞ্জস্যের মধ্যে প্রোথিত’ বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়া ও বিনিময়ের ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের মৈত্রীর বন্ধন আরও সুদৃঢ়, বহুমুখী এবং সম্প্রসারিত হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল ক্ষেত্রে এখন দুদেশের জনগণের মধ্যে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ, বাণিজ্য, ব্যবসা ও সংযোগ বাড়াতে নজর দেয়া দরকার, যা উভয় পক্ষের জন্য ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।’

কভিড-১৯ মহামারির জন্য আরোপিত বিধিনিষেধের পরও দুদেশের সর্বস্তরের সম্পর্ক স্থিতিশীল ও জোরালো রয়েছেÑমন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মহামারি মোকাবিলায় আমাদের চমৎকার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের মধ্যে তার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘দুদেশের সম্পর্কের মধ্যকার গুরুত্বে আমাদের বিশ্বাস অবিচল। সে সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি ও আগামীর পথে তার প্রতিফলনের সুযোগ এই বার্ষিকী। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী গতিশীল অংশীদারিত্বকে জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে নিজেদের পুনরায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করার একটি উপলক্ষও এটি।’

ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা, নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ইমরান উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০