Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:26 pm

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নতুন করে গড়ার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার এখন সময় এসেছে। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার এটাই সময়। আমাদের অংশীদারিত্বকে দেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটানো প্রয়োজন।

গত বুধবার লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারে স্পিকার্স হাউস স্টেট রুমে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ফিফটি: দ্য রিজিলেন্ট ডেল্টা’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। পার্লামেন্ট সদস্য রুশানারা আলী, হাউস অব লর্ডসের সদস্য লর্ড জিতেশ গাধিয়া ওয়েস্টমিনস্টারে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র: বাসস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যিকার অর্থে দু’দেশের সম্পর্ক বর্তমানে কৌশলগত হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সামুদ্রিক ও বিমান পরিবহন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাদের সহযোগিতার ওপর দৃষ্টি দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অভিবাসীদের নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। ওয়েস্টমিনস্টারে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রতিনিধিত্ব দেখে আমি আনন্দিত। আবার তাদের সবাই নারী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বৈচিত্র্যপূর্ণ এ মহান পার্লামেন্টে তাদের আরও অনেকে নির্বাচিত হবেন।

রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান খুঁজে বের করতে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংকট নিরসনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু কক্সবাজারের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ আরও তীব্র হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জগুলো শিগগির এ অঞ্চলে এবং এর বাইরেও বিস্তার লাভ করতে পারে। রোহিঙ্গারা যাতে অবিলম্বে নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। এ সংকট জিইয়ে রেখে সংশ্লিষ্ট সবার অর্জন হবে কেবল শূন্য।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশকে একটি সম্ভাবনা ও প্রতিশ্রুতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের স্থিতিস্থাপকতা থেকে দেশ শক্তি অর্জন করেছে। এখন দেশ সুযোগ নিতে প্রস্তুতÑএকটি মিশন ও ভিশন নিয়ে তাকিয়ে আছে ভবিষ্যতের দিকে।

প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং ডিজিটালাইজেশনসহ নানা ক্ষেত্রে  বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্জন ও উন্নয়নের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আট দশমিক ১৫-সহ বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গড় হার ছয় শতাংশের ওপর। বাংলাদেশের জিডিপি (মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন) ২০০৮ সালের ২৪৩ শতাংশ থেকে ২০২১ সালে ৩২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে এবং নামমাত্র জিডিপির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বে ৪১তম। সরকার গত এক দশকে দরিদ্রতার হার ৩১ দশমিক পাঁচ ভাগ থেকে ২০ দশমিক পাঁচ ভাগে কমিয়ে এনেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর।

তিনি আরও বলেন, মাথাপিছু আয় ২০০৮ সাল থেকে তিনগুণ বেড়ে এ বছর হয়েছে দুই হাজার ২২৭ মার্কিন ডলার। অপরদিকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাতগুণ বেড়ে ২০২১ সালে হয়েছে ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্দেশ্য ছিল একটি পরিবর্তনের অঙ্গীকার। আমাদের সরকার মূল ভিত্তি গড়ে দিয়েছে এবং আমাদের জনগণ তা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

কভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহামারি মোকাবিলা আবার আমাদের সহনশীলতা পরীক্ষা করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম কভিড-১৯ মৃত্যুর হার ছিল আমাদের দেশে। আমরা গ্লোবাল ভ্যাকসিনে আমাদের ইক্যুইটি নিশ্চিত করতে প্রস্তুত রয়েছি।

বাংলাদেশ জলবায়ুর ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমরা রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। আমরা জলবায়ু অভিযোজনে বিশ্বনেতা। আমরা এখন জলবায়ু-সহনশীলতা নিয়ে কাজ করছি। সম্প্রতি আমরা ১০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা বাতিল করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি বজায় রেখেছে। তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ ভিন্ন দিকে পরিচালিত হয়েছিল। সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি পুনরুদ্ধার করতে দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাজনৈতিক সংগ্রাম করতে হয়েছে।

সাম্প্রদায়িক শক্তির সম্পৃক্ততা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতে পুনর্বাসিত সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনও আমাদের সামাজিক কাঠামোকে ব্যাহত করছে। তাদের বিষাক্ত থাবা এখন সাইবার স্পেসে ছড়িয়ে পড়েছে। এ শক্তির বিরুদ্ধে এখনও সংগ্রাম অব্যাহত আছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা মনোযোগী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫০ বছর বয়সে বাংলাদেশ এখনও একটি উম্মোচিত গল্প। আগামী অধ্যায়গুলো হবে আরও রোমাঞ্চকর। আমি আপনাদের সঙ্গে থাকার এবং এই উদ্যোগে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য আপনাদের অনুরোধ করছি।