সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে। গত অর্থবছরে এ অঞ্চলে ১০ হাজার ১৩৩ গ্রাহক থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ২৯ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রেলওয়ে দুই কোটি ৭২ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে গ্রাহকদের।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রমতে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পিডিবি, ডিপিডিসি ও ডেসকো থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে। এসব বিদ্যুৎ রেলওয়ের অফিস, কারখানা ও বিভিন্ন স্টেশনে ব্যবহারের পর বাকিগুলো রেলওয়ের বাসাবাড়ি ও নন-রেলওয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করা হয়। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে এমন গ্রাহক আছে মোট ১০ হাজার ১৩৩ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে আছে ছয় হাজার ৫১৬ জন এবং ঢাকা বিভাগে তিন হাজার ৬১৭ জন। তার মধ্যে রেলওয়ের গ্রাহক ৯ হাজার ২০৫ জন, নন-রেলওয়ে গ্রাহক ৯২৮ জন।
পূর্বাঞ্চল সূত্রে আরও জানা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগে রেলওয়ের বাসাবাড়িতে গ্রাহক আছে পাঁচ হাজার ৮৫৫ জন। এসব গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় এক কোটি ৩৬ লাখ ৪৬ হাজার ইউনিট। এর বিপরীতে তাদের কাছ থেকে বিল আদায় করা হয় সাত কোটি ২০ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। অপরদিকে নন-রেলওয়ে গ্রাহক আছে ৬৬১ জন। নন-রেলওয়ে গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় সবই বিভিন্ন বেসরকারি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। এসব গ্রাহকের কাছে গত এক বছরে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় ৪১ লাখ ইউনিট। এই বিদ্যুৎ সরবরাহের বিপরীতে রেলওয়ে রাজস্ব আয় করে পাঁচ কোটি ১৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। অপরদিকে ঢাকা বিভাগে রেলওয়ের গ্রাহক আছে তিন হাজার ৩৫০ জন। এসব গ্রাহকের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় ৮২ লাখ ৫১ হাজার ইউনিট। এসব ইউনিট বিক্রির বিনিময়ে রেলওয়ে আয় করে চার কোটি ৩৪ লাখ টাকা। নন-রেলওয়ে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয় ১২ লাখ ইউনিট। নন-রেলওয়ে গ্রাহতদের কাছ থেকে আয় হয় এক কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
রেলওয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে ছয় হাজার ৫১৬ বৈধ গ্রাহক থাকলেও অবৈধ গ্রাহক কী পরিমাণ আছে তার কোনো হিসাব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দিতে পারেনি। রেলওয়ের বাসাবাড়িতে বসবাসকারী একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী দাবি করেন, প্রায় প্রতিদিন শিডিউলের অতিরিক্ত সময় ধরে লোডশেডিং হয়ে থাকে। এর কারণ হিসেবে তারা রেলওয়ের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বস্তি ও স্থাপনা তৈরি করে অবৈধ সংযোগের কথা উল্লেখ করেন।
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী শেখ ফরিদ শেয়ার বিজকে জানান, রেলওয়ের যেকয়টি ফিডার আছে, প্রতিদিন শিডিউল অনুযায়ী একবার করে লোডশেডিং করা হয়। তিনি আরও জানান, সন্ধ্য ৬টা থেকে রাত ১১টার মধ্যে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট লোডশেডিং করা হয়। পিডিবি থেকে লোডশেডিং হলে আমাদের করার কিছু নেই।
এদিকে পিডিবির সহকারী পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জমান শেয়ার বিজকে বলে, পিডিবি রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে মোট পাঁচ দশমিক ৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। খুলশী এলাকায় দেওয়া হয় তিন মেগাওয়াট। স্টেডিয়াম এলাকায় দুই মেগাওয়াট। এছাড়া পাহাড়তলীতে ২৫০, মাদারবাড়ী এলাকায় ২০০, ফৌজদারহাটে ১৯৮ এবং বাড়বকুণ্ড এলাকায় ২৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিগত বছরসহ চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রেলওয়ের কাছে তিন কোটি ৯২ লাখ টাকা বকেয়া পায় পিডিবি। এর মধ্যে তিন কোটি ২৪ লাখ টাকা আসল ও ৬৭ লাখ টাকা সুদ বাবদ বকেয়া রয়েছে।
অবৈধ সংযোগ ও পিডিবির বকেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, আমরা নিয়মিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে থাকি। তবে বস্তিগুলোতে রাতের বেলায় হুক মারা হয়। এসব অবৈধ সংযোগ রাজনৈতিক ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় হয়ে থাকে। পিডিবির বকেয়া সম্বন্ধে তিনি বলেন, পিডিবির এই হিসাব পুরোপরি সঠিক নয়। বর্তমানে আমাদের তেমন একটা বকেয়া নেই, তবে পুরোনো বকেয়া থাকতে পারে। পিডিবি যথাসময়ে আমাদের বিলের রসিদ পাঠাতে ব্যর্থ হয়। ১৫ থেকে ২০ তারিখের পরে রসিদ পাঠালে সময়মতো পরিশোধ করতে সমস্যা হয়। তবে সুদ না দেওয়ার ক্ষেত্রে পিডিবির সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়ে থাকে।
Add Comment