কাজী সালমা সুলতানা: আইন পরিষদের সদস্যদের প্রতি ছাত্রদের গুলি চালানোর প্রতিবাদে অধিবেশন বর্জন করার দাবি জানানো হয়। পুলিশের গুলি চালানোর সংবাদ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে শহরের প্রান্তে থেকে প্রান্তে। সঙ্গে সঙ্গে অফিস-আদালত সেক্রেটারিয়েট বেতারকেন্দ্রের কর্মচারীরা অফিস বর্জন করে বেরিয়ে আসেন। সারা শহর থেকে অসংখ্য মানুষ মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে এসে হাজির হন। ততক্ষণে সব পুলিশ সরে পড়েছে। রাস্তায় আর অলি-গলিতে প্রবল বেগে বিক্ষুব্ধ মানুষের ঝড় বয়ে চলে। মেডিকেল হোস্টেলের ব্যারাকে শহিদদের রক্তে রঞ্জিত রক্তের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সব মানুষের মন থেকে যেন সে সময় সব ভয়-ত্রাস মুছে, সবার চোখে-মুখে ২১ ফেব্রুয়ারির এ বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিরোধের দুর্জয় শপথ প্রকাশিত হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টায় বিধান পরিষদের অধিবেশন শুরু হলে পূর্ববাংলার ২৩টি আসন শূন্য থাকে। পূর্ববঙ্গ পরিষদের মোট আসন ছিল ১৬৯টি। কৃষিমন্ত্রী হামিদুদ্দিন আহমেদ ২১ ও ২১ তারিখ দু’দিনই অনুপস্থিত ছিলেন। ২২ ফেব্রুয়ারি দৈনিক ইনসাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী এদিন মোট ৩৫ সদস্য পরিষদ কক্ষ ত্যাগ করেন। সর্বদলীয় কর্মপরিষদের আহ্বানে সমগ্র পূর্ববাংলার নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাজশাহী, বরিশাল, জামালপুরসহ বহু স্থানে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ও আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রতিবাদে ধর্মঘট পালিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক মোহাম্মদ সুলতানের বক্তব্য থেকে জানা যায় মেডিকেল কলেজ, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, ফজলুল হক হল ও জগন্নাথ কলেজে ঘোষণা করা হয়, আগামীকাল ২২ ফেব্রুয়ারি ঘরে ঘরে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। যেখানে বরকতের গুলি লেগেছিল, সেখান থেকে শহীদদের মৃতদেহ ও তাদের রক্তে রঞ্জিত পতাকাশোভিত মিছিল বের হয়। ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা আরও বিক্ষোভ, প্রতিবাদ ও উত্তেজনায় বিচলিত হয়ে ওঠে। সেদিনও পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত ও শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। আহতদের মধ্যে ৪৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিনও ১৪৪ ধারা অমান্য করার কর্মসূচি ছিল।
সারা শহরকে আপাতদৃষ্টিতে একটি সামরিক ছাউনি বলে প্রতীয়মান হতে থাকে। এদিন শহরের সব দোকানপাট ও বাজারঘাট সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। অফিস-আদালত এমনকি সেক্রেটারিয়েট থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সবাই কাজে যোগদান থেকে বিরত থেকে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। (সূত্র-ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস)