Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:09 pm

বাংলা আমার মায়ের ভাষা

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ভাষা প্রশ্নে বিতর্কের প্রতিবাদে ঢাকায় ২৬ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট পালন হয়। এই খবর পাবনায় পৌঁছালে সেখানকার ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলো এক জরুরি সভায় মিলিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরদিন ২৭ ফেব্রুয়ারি সর্বস্তরের সংগঠনগুলোর সভা আহ্বান করা হয়। সভায় সর্বসম্মত ক্রমে সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।

এদিকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পাবনা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পাবনার প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা আবদুল্লাহেল বাকি আল কোরায়শী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা করে উর্দুর পক্ষে প্রচার চালাতে থাকেন।

হরতাল শুরু হলে প্রথমে ছাত্রনেতারা একযোগে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। মিছিলটি পাবনার প্রধান ডাকঘরের সম্মুখে এলে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়। পুলিশ ছাত্রদের ওপর বেয়নেট চার্জ করে। এতে ছাত্রদের তাজা রক্তে পাবনার রাজপথ রঞ্জিত হয়। বহু ছাত্রনেতাদের আটক করা হয়। আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে শহরের চতুর্দিক থেকে মিছিল থানার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জেলা জজের স্ত্রী আটক ছাত্রনেতাদের জন্য গরম দুধ ও এক কলসি ঠাণ্ডা পানি পঠিয়ে দেন এবং অনুরোধ করেন ছাত্ররা যেন মায়ের স্নেহ ফিরিয়ে না দেয়। পরে সব ছাত্রকে বিনাশর্তে মুক্ত করেন।

কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কল কারখানায় সাধারণ ধমর্ঘটের কর্মসূচি ঘোষণা করে। পাবনার ছাত্র সংগঠনগুলো তখন এই কর্মসূচি সফল করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু এর আগেই ছাত্রনেতাদের পুলিশ আটক করে। ১০ মার্চ ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনেককেই আটক করা হয়।

১১ মার্চ এডওয়ার্ড কলেজ থেকে যথারীতি মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিল যতই অগ্রসর হচ্ছিল মিছিলে লোকসংখ্যা ক্রমেই বেড়ে একসময় মিছিলটি বিশাল রূপ ধারণ করেছিল।

 ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন ১৯৪৯ সালে এসেও অব্যাহত গতিতে এগিয়ে চললেও আন্দোলনে বেশ ভাটা পড়ে। সে সময় প্রধানত প্রচারপত্র বিলি ও পোস্টারের মাধ্যমে তখন আন্দোলনকে সজীব রাখার চেষ্টা করা হয়। এই তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৪৯ সালের ১৩ আগস্ট কমিউনিস্ট কর্মী প্রসাদ চন্দ্র রায় ও লিলি চক্রবর্তীকে আটক করা হয়।