কাজী সালমা সুলতানা: রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যখন বিতর্ক চলছিল তখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা এ কে ফজরুল হক প্রমুখ কেউই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ববঙ্গে ফিরে আসেননি। এ কারণে পাকিস্তানের একাংশ পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছিল। সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রভাষাসহ প্রশাসনিক অন্যান্য বিষয়ে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীনরা পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ পান। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী একচেটিয়াভাবে পাকিস্তানের উচ্চতর প্রতিটি ক্ষেত্রে আধিপত্য পাকাপোক্ত করলেও কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারছিলেন না। এমনি সময়ে দেশের কিছু সাংস্কৃতিকসেবী, অধ্যাপক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীরা কয়েক দফা বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়ে আন্দোলন নিয়ে কী করা যায় এ বিষয়ে পরামর্শ করেন।
১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস গঠন হওয়ার পর থেকে অধ্যাপক আবুল কাশেমের বাসভবন ঢাকার ১৯ নম্বর আজিমপুর রোড থেকে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন গড়ে তোলার কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। ৭ সেপ্টেম্বর তারিখে এই বাসভবনে একটি কক্ষ সংগঠনটির অফিস হিসেবে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম অফিস এটি। ১৫ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।
আজিমপুরের এ ১৯ নম্বার বাড়িটি হয়ে ওঠে ভাষা আন্দোলনের সুতিকাগার। এ অফিসে অধ্যাপক আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ৩০ সেপ্টেম্বর ভাষা আন্দোলন ও মজলিসের আদর্শ উদ্দেশ্যের পক্ষে জনমত গঠন করার পক্ষে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত হয় (ড. নুরুল হক ভূইয়া ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৯)।
পরে রশিদ বিল্ডিংয়ে তমদ্দুন অফিস ভবনে ভাষা আন্দোলন বিরোধীদের কয়েক দফা হামলা হয়। এর ফলে ভাষা আন্দোলন অফিস নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। পুলিশ কর্তৃক মজলিস অফিস ও সংগ্রাম পরিষদ অফিসে তালা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন স্থানে অফিস স্থাপন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ১৯৪৮ সালের ২৫ জানুয়ারি তমদ্দুন মজলিসের অফিস রশিদ বিল্ডিং থেকে ফজলুল হক হলে স্থানান্তরিত হয়। স্থানান্তরের পর বাইরে বড় করে লেখা হয় ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। (সূত্র: একুশে সংকলন-বাংলা একাডেমি ১৯৮০)।