কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সাল। রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়। এ বছরের ১১ মার্চ ঢাকার ছাত্রসমাজ পাকিস্তান গণপরিষদে ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলা ভাষা ব্যবহারের দাবি অগ্রাহ্য হওয়ার প্রতিবাদ জানায়। ধর্মঘট প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের মধ্য দিয়ে এদিন প্রথম রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করা হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাজপথ-জনপথে আন্দোলন ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামে পরিণত হয়।
ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতার মুখে সেদিন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হন। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এ চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন কামরুদ্দীন আহমেদ।
তবুও সেদিন ছাত্রবিক্ষোভে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ, ফাঁকা গুলি, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ হয়; এতে বহু ছাত্র আহত হয়। আটককৃত ছাত্রদের মুক্তির দাবি করেন ছাত্রনেতারা। ২৯ ফেব্রুয়ারি সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বলা হয় গ্রেপ্তারকৃত অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে।
পাকিস্তান সরকারের এই দমননীতির ফলে ছাত্রদের ন্যায্য দাবির আন্দোলন আরও জোরদার হয়। ১১ মার্চ থেকে প্রতিদিন ছাত্ররা প্রাদেশিক পরিষদ ভবনের সামনে (বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল), বর্ধমান হাউসে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সরকারি বাসভবনে (বর্তমান বাংলা একাডেমি) হাইকোর্ট ও সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে তারা তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ আফজাল ও শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। ছাত্রদের এই বিক্ষোভ দমাতে সেনাবাহিনীকে তলব করা হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ছাত্রদের দ্বারা ঘেরাও হওয়া পরিষদ ভবন থেকে খাজা নাজিমুদ্দিনকে বের করে আনা হয়।
১৯৪৮ সাল, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ। পূর্ববাংলা সরকারের ব্যবস্থাপক সভায় বেসরকারি আলোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পাকিস্তান গণপরিষদ ও কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষা দিতে উর্দুর সমমর্যাদাদানের জন্য একটি বিশেষ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। এ সভায় প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, প্রাদেশিক সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলাকে সরকারি ভাষা রূপে স্বীকৃত দেয়া হবে। ১১ মার্চের আন্দোলনে যেসব ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিল, তাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। সংবাদপত্রের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে। আরও বলা হয়, ২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পূর্ববাংলার যেসব স্থানে ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। পূর্ববাংলা সরকারের ব্যবস্থাপক সভায় বলা হয়, এ আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়নি।