কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সারা পূর্ববাংলায় ভাষা আন্দোলন নিয়ে যে ঐতিহাসিক গণ-বিক্ষোভ শুরু হয় তার পরে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দীনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদিত হয়। কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা সফরের সময় তা মানতে অস্বীকার করে করেন।
১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ দিনগুলোতে ভাষা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়। খাজা নাজিমুদ্দীন তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ইতোমধ্যে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মারা যান আর প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খাঁকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপরই পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে পাকিস্তান মুসলিম লীগ কাউন্সিলের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ২৭ জানুয়ারি পল্টনে মুসলিম লীগের এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন।
তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে’। নাজিমুদ্দীনের এই বক্তৃতায় ছাত্রসমাজ স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভায় বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট সভার ঘোষণা করে।
১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সব বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে পূর্ণ ধর্মঘট পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের এদিন সভার সভাপতিত্ব করেন গাজিউল হক। সভায় বক্তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রয়াস বন্ধ করার দাবি জানায়। সভাশেষে প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রীর মিছিল থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ ইত্যাদি সেøাগান দেয়া হয়।
এই ছাত্র ধর্মঘট প্রদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। যশোর, নোয়াখালী, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লায় বিক্ষোভ সভা কর্মসূচি পালিত হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কয়েকদিন ধরে ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘি ময়দানে ৪ জানুয়ারি জনসভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, গণপরিষদের বাঙালি সদস্যরা যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করিয়ে নিতে না পারেন তবে তারা যেন পদত্যাগ করেন।
(সূত্র: আমাদের ভাষার লড়াইÑবদরুদ্দীন উমর ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বশীর আল হেলাল)