বাংলা আমার মায়ের ভাষা

কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৫২ সালে ৩০ জানুয়ারি গঠিত হয় ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’। সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট সভার ঘোষণা করে।

১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সব বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রছাত্রী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে পূর্ণ ধর্মঘট পালন করে। এদিন বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জমায়েত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের এ সভার সভাপতিত্ব করেন গাজিউল হক। সভায় বক্তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা এবং আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের প্রয়াস বন্ধ করার দাবি জানায়। সভাশেষে প্রায় দশ হাজার ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে প্রাদেশিক প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিনের বাসভবন হয়ে নওয়াবপুর রোড হয়ে নাজিমুদ্দিন রোড অতিক্রম করে। এই মিছিল থেকে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘আরবি হরফে বাংলা লেখা চলবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়া হয়।

এ ছাত্র ধর্মঘট প্রদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, সর্বত্র শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ও সংগঠনে রূপান্তরিত হয়। যশোর, নোয়াখালী, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, চাঁদপুর, ফেনী, কুমিল্লায় বিক্ষোভ সভা কর্মসূচি পালিত হয়। চাঁদপুরে স্কুল-কলেজে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালিত হয়। এছাড়া চট্টগ্রামে ৪ ফেব্রুয়ারির পর থেকে কয়েকদিন ধরে ভাষার দাবিতে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রাম শহরের লালদিঘি ময়দানে ৪ জানুয়ারি জনসভায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা দাবি করেন, গণপরিষদের বাঙালি সদস্যরা যদি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করিয়ে নিতে না পারেন তবে তারা যেন পদত্যাগ করেন।

এতদিনে বাংলাভাষা ও বর্ণের অধিকার প্রদেশবাসীর হƒদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এই সুপ্ত আবেগের মহড়ায় স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তিই ২১ ফেব্রুয়ারি আগমন বার্তা আনে।

১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় ২১ ফেব্রেুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের নেয়া হয় এবং ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি পতাকা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

(সূত্র: আমাদের ভাষার লড়াই বদরুদ্দীন উমর ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস বশীর আল হেলাল)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০