কাজী সালমা সুলতানা: রাষ্ট্রভাষা কেন্দ্রীয় কমিটি ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি প্রদেশের সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট ও শোভাযাত্রা পালন করা হবে। সেই সঙ্গে ৪ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিবাদ দিবস পালনের প্রস্তুতি চলে। একই দিন পাকিস্তান সরকার পূর্ববঙ্গ আইন পরিষদের বাজেট অধিবেশন আহ্বান করে। অধিবেশনের উদ্দেশ ছিল, বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
এদিকে পূর্ববঙ্গ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরো এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ ও শোভাযাত্রা নিষেধ করে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্ররা অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠে। ২০-২১ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফজলুল হক হল আর ঢাকা হলের (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) মাঝখানে পুকুর পাড়ের সভা থেকে যেকোনো মূল্যে ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, গাজীউল হক ২১ ফেব্রুয়ারির আমতলার সভায় সভাপতিত্ব করবেন। আর যদি তিনি সভার আগেই গ্রেপ্তার হয়ে যান তবে এমআর আক্তার মুকুল সভাপতিত্ব করবেন আর যদি তিনিও গ্রেপ্তার হন তাহলে কমরুদ্দিন শহুদ সভাপতিত্ব করবেন। এ উপলক্ষে রাতভর বহু পোস্টার লেখা হয় ও পোস্টারিংও করা হয়।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। এদিন সকাল ৯টার দিকেই শহীদুল্লাহ কায়সার ও মোহাম্মদ তোয়াহ মেডিকেল কলেজের সামনে আসেন। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ থেকে চার-পাঁচজন করে জড়ো হতে থাকেন। বেলা একটু যেতেই আমতলা, মধুর রেস্তোরাঁ ও মেডিকেল ব্যারাক ছাত্রছাত্রী জমায়েতে একাকার। এরই মধ্যে পুলিশের কয়েকটি জিপ, ট্রাক এবং একটি বাস কলাভবনের বাইরের রাস্তায় ও ব্যারাকের সামনে ফুলার রোডে এবং আশপাশে জমা হন।
বেলা ১১টায় আমতলায় সভা শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল মতিন তার বক্তব্যে বলেন, ‘জালেম সরকারের নিষেধাজ্ঞা ১৪৪ ধারাকে প্রতিরোধ করা না গেলে অনাগত দিনে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকারও অবশিষ্ট থাকবে না। নুরুল আমিন সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করেছে। ১৪৪ ধারা ভাঙা হলে নাকি গুলি করা হবে। আমরা সরকারের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমরা দেখতে চাই নুরুল আমিনের অস্ত্রাগারে কত বুলেট জমা আছে।’ তার বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চারদিক থেকে সেøাগান ওঠে ১৪৪ ধারা মানি না, মানি না। (সূত্র-ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস)