কাজী সালমা সুলতানা: ২২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শহিদ মিনার তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়। কার্ফ্যুয়ের মধ্যে ২৩ তারিখ বিকাল থেকে শুরু করে সারারাত সেখানে কাজ করা হয়। এই শহিদ
মিনারের নকশা করেছিলেন ডা. সাঈদ হায়দার। আজকের শহিদ মিনার যেখানে তার কাছাকাছিই প্রথম শহিদ মিনার তৈরি করা হয়।
প্রথমে শহিদ শফিউর রহমানের বাবাকে দিয়ে এ শহিদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও ধড়পাকড় শুরু হয়। ভেঙে ফেলা হয় শহিদদের স্মরণে প্রথম শহিদ মিনার। প্রথম শহিদ মিনার তদানীন্তন শাসক গোষ্ঠী ভেঙে ফেললেও শহিদদের স্মৃতি অক্ষয় হয়ে যায় মানুষের হƒদয়জুড়ে। ‘শহিদ স্মৃতি অমর হোক’Ñএই সেøাগান তখনই চালু হয়ে যায়।
এর পরের বছর একুশে ফেব্রুয়ারির আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার নির্মাণকাজ। এর পরই গোটা পূর্ববাংলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদ স্মৃতির মিনার গড়ে ওঠে। প্রথম শহিদ মিনারটি ভেঙে দেয়া হলে কবি আলাউদ্দীন আল আজাদ লেখেন:
‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কী বন্ধু, আমরা এখনও
চার কোটি পরিবার
খাড়া রয়েছি তো! যে-ভিত কখনও কোনো রাজন্য
পারেনি ভাঙতে
হীরের মুকুট নীল পরোয়ানা খোলা তলোয়ার
খুরের ঝটকা ধুলায় চূর্ণ যে পদ-প্রান্তে
যারা বুনি ধান
গুণ টানি, আর তুলি হাতিয়ার হাঁপর চালাই
সরল নায়ক আমরা জনতা সেই অনন্য।
ইটের মিনার
ভেঙেছে ভাঙুক! ভয় কী বন্ধু, দেখো একবার আমরা জাগরী
চার কোটি পরিবার।’
প্রথম কবিতাটি লেখা হয় একুশে ফেব্রুয়ারির দিনই। চট্টগ্রামে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী ঢাকার মিছিলে গুলি চলার খবর পেয়ে ওইদিনই রচনা করেন:
‘এখানে যারা প্রাণ দিয়েছে
রমনার ঊর্ধ্বমুখী কৃষ্ণচূড়ার তলায়
যেখানে আগুনের ফুলকির মতো
এখানে-ওখানে জ্বলছে অসংখ্য রক্তের ছাপ।’
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারির এত রক্তপাতের পরও বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়নি। তখন থেকেই বাঙালি জাতি পা বাড়িয়েছে আন্দোলন আর দাবি আদায়ের পথে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৩ সালে বন্দিমুক্তি আন্দোলন করা হয়। ১৯৫৪ সালের মার্চে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে বিপুল বিজয় হয় যুক্তফ্রন্টের, মুসলিম লীগের ভরাডুবি হয়। ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সাল এই দুই বছরও ভাষা আন্দোলন আরও জোড়দার হয়ে ওঠে। চলমান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা পাকিস্তানের অন্যতম প্রাদেশিক ভাষার স্বীকৃতি পায় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি। সে সময় সংবিধানের ২১৪নং অনুচ্ছেদে কিছু শর্তসাপেক্ষে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়: ‘ঞযব ংঃধঃব ষধহমঁধমবং ড়ভ চধশরংঃধহ ংযধষষ নব টৎফঁ ধহফ ইবহমধষর.’ বাংলা একাডেমির ১৯৭০ সালে পাকিস্তান সরকারের শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা বিভাগ ১৯৭০ সালেই শিক্ষানীতি কমিশন গঠনের ব্যবস্থা করে।
(সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস Ñবশির আল হেলাল)