কাজী সালমা সুলতানা: ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ আন্দোলনে আহত হন ২০০ জন, যাদের মধ্যে গুরুতর আহত ছিলেন ১৮ জন। এ সময় আটক ছিলেন ৯০০ জন, যাদের অনেককেই ছেড়ে দেয়া হয়। জেলবন্দি করা হয় ৬৯ জনকে। ১৫ মার্চ ভাষা আন্দালনের বন্দি ছাত্র ও কর্মীদের মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তির পর তাদের একটি ট্রাকে চড়িয়ে শহরের মধ্যে ঘোরানোর পর ফজলুল হক হলে সেদিনই সন্ধ্যায় তাদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শওকত আলী ও শেখ মুজিবুর রহমান ১৬ মার্চ ফজলুল হক হলে গিয়ে একটি প্রতিবাদ সভার জন্য ছাত্রদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। ৯টায় সেখানে রাষ্ট্রভাষা পরিষদের বৈঠক হয়। এদিন সকালের দিকেই প্রধানমন্ত্রী তুফাজ্জল আলীর মাধ্যমে জানতে চান চুক্তির পর আন্দোলন প্রত্যাহারের যে কথা ছিল সে অনুযায়ী কাজ হচ্ছে না কেন? সংগ্রাম কমিটি তাকে জানায়, আন্দোলনের ওপর তাদের হাত নেই। আন্দোলন এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে হঠাৎ করে তা বন্ধ করা সম্ভব নয়। ১৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যে চুক্তি হয়, তা কয়েক জায়গায় সংশোধন করা হয়। সংশোধন গৃহীত হলে অলি আহাদের মাধ্যমে তা প্রধানমন্ত্রী নাজিমুদ্দিনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সভা শেষে শেখ মুজিবুর রহমান বক্তৃতার পর একটি অনির্ধারিত মিছিল সরকারের বিরুদ্ধে ও বাংলা ভাষার সমর্থনে ধ্বনি দিতে দিতে পরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হয়।
মিছিলটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও পরিষদ ভবনের কাছে পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। ছাত্ররা তখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বেড়া পার হয়ে ভেতর থেকে নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবি করে এবং পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে সেøাগান দিতে থাকে। ভেতরে অধিবেশন চলছে, বাইরে ছাত্রদের বিক্ষোভ-হট্টগোল। সন্ধ্যা পর্যন্ত ছাত্রদের এই বিক্ষোভ চলে। অধিবেশন শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টা পর পর্যন্ত স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও মন্ত্রীরা ঘেরাও হয়ে থাকেন। ম্যাজিস্ট্রেট শামসুল হককে ডেকে বলেন, পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি ছাত্ররা এলাকা ত্যাগ না করে তাহলে তাহলে লাঠিচার্জ করা হবে। বলামাত্রই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। এতে ১৯ জন আহত হন। রাত ১১টায় সংগ্রাম পরিষদের বৈঠক বসে এবং চলে রাত ২টা পর্যন্ত। সিদ্ধান্ত হয় পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মঘট ও সভা হবে, কোনো মিছিল হবে না। ১৭ মার্চ ঢাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ধর্মঘট শেষে জিন্নাহর ঢাকায় আগমন উপলক্ষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় ধর্মঘট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।